টুম্পা আহম্মদ উদ্দিন শাহ্ শিশু নিকেতনে কেজিতে পড়ে। বয়স চার বছর। কথাগুলো খুব মিষ্টি। ঝরঝর করে কথা বলে। পড়াশোনায় খুব ভালো। কোনো ফাঁকি নেই।
সময়টা শীতকাল। এখন স্কুল শীতকালীন ছুটি। তাই টুম্পার একটুও ভালো লাগছে না। কারণ,
শিক্ষকদের সঙ্গে কিছুদিন দেখা হবে না;
রুটিনমাফিক পড়তে হবে না;
বাড়ির কাজ করতে হবে না;
ক্লাস করতে হবে না;
সহপাঠীদের সঙ্গেও তেমন ভাবে কিছু দিন দেখা হবে না;
একসঙ্গে টিফিন খাওয়া হবে না;
আইসক্রিমের দোকানে দলবেঁধে ছুটে যাওয়া হবে না।
বোরিং লাগছে টুম্পার।
বাবাও অফিস থেকে ছুটি পেয়ে বাড়ি এলেন। বাবা লক্ষ করেন, কেমন জানি টুম্পা একা একা কথা বলে। মুখের নাড়াচাড়া দেখলে বোঝা যায়, টুম্পা দিন গোনে। কেমনে চলে যাবে ষোলো দিন। বাবাও বুঝতে পেরে টুম্পাকে বুকে টেনে নিলেন। আর মাকে বললেন, টুম্পাকে সাজিয়ে দাও। তুমিও সাজো। আমরা ভিন্ন জগৎ ভ্রমণে যাব। মা ও টুম্পা সেজেগুজে রেডি। সাজলেও সে যাবে না। টুম্পা নাছোড়বান্দা। যাবে না মানে যাবে না। বাবা অনেকভাবে বুঝিয়ে বললেন। তোমার মন ভালো হবে। তুমি গেলেই বুঝতে পারবে, ছুটির বন্ধু হলো ভ্রমণ। সেজন্যই তো আমাদের পারিবারিক ভ্রমণ। টুম্পা তখন মা বাবার সঙ্গে ভ্রমণে যায়। ভিন্ন জগতে গিয়ে প্রথমে টুম্পা বরফের দেশ দেখল। তারপর সৌরজগতে। আকাশে কী আছে তা তো আর সবকিছু মুক্ত আকাশে দেখেনি। তবে সৌরজগৎ টুম্পা বিজ্ঞান বইয়ে পড়েছে। তা আজ ভিন্ন জগৎ এসে দেখল টুম্পা। সবচেয়ে মজার কথা, হ্যালির ধূমকেতু দেখে টুম্পার বিজ্ঞানচিন্তা বেড়ে যায়।
টুম্পা বাবাকে প্রশ্ন করল?
আচ্ছা বাবা, হ্যালির ধূমকেতু চাঁদ তারাদের মতো নিয়মিত আকাশে দেখা যায় না কেন?
বাবা উত্তরে বললেন? হ্যালির ধূমকেতু সূর্যের চারপাশে ঘুরে পৃথিবীর কাছে আসতে সময় লাগে ছিয়াত্তর বছর। তাই নিয়মিত দেখা যায় না।
আবার টুম্পা বাবাকে প্রশ্ন করে? আচ্ছা বাবা হ্যালির ধূমকেতু সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরতে কতক্ষণ সময় লাগে?
বাবা উত্তরে বললেন? প্রায় দুই শ’ বছর।
বাবার উত্তর শুনে টুম্পা বলে আজ যদি ভ্রমণে না আসতাম এত কিছু জানতে আমার আরও সময় লাগত। হয়তো বা জানলেও সঠিকভাবে বুঝতাম না।
মা-বাবার সঙ্গে টুম্পা ঘুরে ঘুরে দেখল। টুম্পার কেমন জানি চিন্তা চিন্তা ভাব। বাবা বুঝতে পেরে হঠাৎ টুম্পাকে প্রশ্ন করলেন?
আচ্ছা! কেমন লাগছে তোমার?
টুম্পা খুশি হয়ে বলল, খুব ভালো লাগছে আমার। ভিন্ন জগৎ একটি বিজ্ঞানচিন্তা দর্শনের শিক্ষণীয় জায়গা।
টুম্পার ছোট মুখে তুলতুলে আনন্দের মিষ্টি কথা শুনে বাবা খুশি হলেন।
মা-বাবার হাত টুম্পা দুই হাতে চেপে ধরে মাঝখানে ঝুমুর নৃত্যের তালে দোল খায়। কোমল বাতাসে উড়ছে টুম্পার চুল। ধুলোগুলোও নাচছে তাল মিলিয়ে। তার মুখে গোমড়া মুখে হাসি দেখে হাসছেন মা-বাবা। হাসিগুলোকে সুখের পরশ মেখে নীল আকাশে জড়ো করছে শিমুল ফুলের তুলো।
এসব দেখে টুম্পা মা-বাবার হাত ছেড়ে শিমুল ফুলের তুলোকে ডেকে বলছে, আমাকেও সঙ্গে নাও। আমিও যাব নীল আকাশে।
টুম্পার খই ফোটানো মিষ্টি কথায় মা-বাবাও যেন ডুবিয়ে গেছেন সুখের সাগরে।
হাসিগুলো নীল আকাশে গিয়ে মেঘ হচ্ছে।
টুম্পা একটু লাফ দিয়ে একটি শিমুল ফুলের তুলো ধরল। টুম্পার সঙ্গে মা-বাবাও খুনসুটিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এমন সময় একা একা কেউ নদী পার হতে গেলে তাকে কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতে হতো। রাতে খেয়াঘাটে মাঝি না থাকলে ভূতেরা নৌকা নিয়ে মাছ ধরত। কেউ পানিতে নেমে গোসল করত। আবার কোনো কোনো ভূত মানুষের রূপ ধরে খেয়া নৌকা নিয়ে ঘাটে বসে থাকত! মানুষ রাতে নদী পার হতে গিয়ে ভূতের নাকানি-চুবানি খেয়ে কেউ জীবন রক্ষা করলেও বোকা ও ভীরু প্রকৃতির মানুষ পটলও তুলেছে। যেসব মানুষ ভূত দেখে বেশি ভয় পায় তাদের ওপরেই ভূতেরা বেশি চেপে বসে। আর সাহসী মানুষ দেখলেই ভূত পালিয়ে যায় এবং বলে এবারের জন্য রক্ষা পেলি, এরপর তোকে ছাড় দেওয়া হবে না। সেই খেয়াঘাটে ভূতের গল্প আজও অনেকের মুখে শোনা যায়। এখন আর সেখানে খেয়াঘাট নেই। নদীর অনেক স্থানে ব্রিজ হয়ে পাকা রাস্তা হয়ে এখন আধুনিক যানবাহন চলাচল করছে। ভূতেরাও এলাকা ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছে আধুনিকের ঘোড়ায় চড়ে।