বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবগুলোর একটি কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। এবছর নরওয়েজিয়ান পরিচালক ইওয়াখিম তৃয়ের -এর নতুন ছবি ‘সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু’ কান-এর গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়্যায় প্রদর্শিত হওয়ার পর, দর্শক টানা ১৯ মিনিট দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছেন।
অনেকের কাছেই বিষয়টি বিস্ময়ের, একটি সিনেমা শেষ হওয়ার পর এত দীর্ঘ সময় ধরে করতালি? একে কি নিছক সিনেমার প্রতি ভালোবাসা বলা যায়, না কি এর পেছনে আরও কিছু আছে?
কান উৎসবের হাততালির সংস্কৃতি
আসলে কানে এমন দৃশ্য বিরল নয়। প্রতি বছর বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সব চলচ্চিত্র এখানে প্রথম প্রদর্শিত হয়। হলভর্তি উপস্থিত দর্শক, সাংবাদিক, সমালোচক এবং ফিল্মের কলাকুশলীরা—সবাই মিলে এক বিশাল আবেগের মুহূর্ত তৈরি করেন। ছবির শেষে দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে তারা পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং কলাকুশলীদের অভ্যর্থনা জানান।
যেমন ২০২৪ সালের পাম দ’অর জয়ী ভারতীয় ছবি ‘অল উই ইম্যাজিন অ্যাজ লাইট’ পেয়েছে ৮ মিনিটের ওভেশন। ২০২৩-এ মার্টিন স্করসেসির ‘কিলার্স অফ দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ পায় ৯ মিনিট; ২০২২-এ ‘এলভিস’ পায় ১২ মিনিট। ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ স্ট্যান্ডিং ওভেশনটি হয় ২০০৬ সালে গিয়ের্মো দেল তোরোর ‘প্যান্স ল্যাবিরিন্থ’ একটানা ২২ মিনিট।
অনেকেই ভাবেন, ছবির মানই বুঝি এই হাততালির দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করে। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি আরও কৌশলগত।
ছবি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্যামেরা ঘুরতে থাকে হলজুড়ে। বড় পর্দায় একে একে দেখানো হয় পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মুখ। যতক্ষণ তাঁদের মুখ স্ক্রিনে থাকে, ততক্ষণ চলতে থাকে হাততালি। কেউ থামেন না, কেউ বসেন না। কখনও কেউ কাঁদছেন, জড়িয়ে ধরছেন, তখন সেই আবেগের প্রতিও করতালি চলে।
প্রচারেও কাজ দেয় এই দৃশ্য। কলাকুশলীদের প্রতিক্রিয়ার এই ভিডিও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়, তৈরি হয় আলোড়ন। যেমন দেখা গিয়েছে এ বছরের ‘হোমবাউন্ড’ ছবির ক্ষেত্রেও প্রযোজক করণ জোহার, পরিচালক নীরজ ঘেওয়ান ও অভিনেতা বিশাল জেঠওয়ার আবেগঘন মুহূর্ত ছড়িয়ে পড়ে নেটদুনিয়ায়।
আসলে একটি সম্মিলিত আবেগ, সম্মান এবং কৌশল—এই তিনের সমন্বয়েই তৈরি হয় কানের এই বিখ্যাত স্ট্যান্ডিং ওভেশন। কেউ হয়তো আবেগে হাততালি দেন, কেউ সম্মান জানাতে, কেউ আবার প্রেক্ষাগৃহে ক্যামেরার সামনে 'আভিজাত্য' বজায় রাখতে।
বিডি প্রতিদিন/মুসা