বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নানা পদক্ষেপ রাজনৈতিক দল ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে বিভক্তি বিভাজন আরো বাড়িয়ে তুলছে। এই ধারা চলতে থাকলে গণ-অভ্যুত্থানের অর্জন বিসর্জনে পর্যবসিত হতে পারে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংহতি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান,আনছার আলী দুলাল ও মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, কেন্দ্রীয় কমিটির বাবর চৌধুরী প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে গণ-অভ্যুত্থানের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সাইফুল হক বলেন, এটা লজ্জার যে আহতদের অনেকেরই এখনো উপযুক্ত চিকিৎসা হয়নি। নিহত ও আহতদের অধিকাংশ পরিবারের এখনো যথাযথ পুনর্বাসন নিশ্চিত হয়নি।
তিনি বলেন, ‘এটা দুঃখজনক যে, সরকার গণ-অভ্যুত্থানের পরিবর্তনকামী জনআকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পারেনি। গত এক বছরে বৈষম্যের বিলোপে কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, কর্মহীনতা, বিনিয়োগে ভাটা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরেছে। কিন্তু অর্থনীতির দুর্বৃত্তায়নের গোটা ব্যবস্থা প্রায় অক্ষুণ্ন রয়েছে। অর্থনৈতিক মাফিয়াদের সঙ্গে সরকার ও তাদের প্রশ্রয়ে থাকা নানা অংশের এক ধরনের বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে।’
পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এটা স্পষ্ট রাজনৈতিক দল ও জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা সরকার প্রজ্ঞার অভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। শুরুতেই আন্দোলনে থাকা ছাত্র তরুণদের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য দেখাতে গিয়ে বাকিদের কাছ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে অহেতুক প্রতিদ্বন্দ্বী বানিয়ে ফেলেছেন। রাজনৈতিক দল ও জনগণের ওপর নির্ভর না করে সরকারের মধ্যে থাকা সরকারগুলো নানা গুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীল ইস্যুতে মব সন্ত্রাসের ওপর নির্ভর করতে চেয়েছেন। এর ফলাফল হয়েছে এক আধা নৈরাজ্য। এই পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করছে রাজনৈতিক লুম্পেন ও অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তরা। এ কারণে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা আরো বিপদের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। ক্রমে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সরকারের কার্যকারিতা বলে তেমন কিছু থাকছে না।’
সাইফুল হক বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক ও জনগণের মধ্যে ঐক্য ও সমঝোতা গড়ে তোলার পরিবর্তে সরকার যেন ভাগ-বিভাজনকেই তাদের নীতি হিসাবে গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে সরকার তাদের নিরপেক্ষতা গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এর সর্বশেষ নজির সরকার প্রধান যে জুলাই ঘোষণা প্রদান করতে যাচ্ছেন অজ্ঞাত কারণে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলকে ঘোষণা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। সরকারের এসব পদক্ষেপ ও আচরণ তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে অপ্রয়োজনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। গণ-অভ্যুত্থান বিজয়কে সরকার খণ্ডিত করে ফেলছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ম্যান্ডেট হচ্ছে তাদের ঘোষণা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করে জাতীয় সংসদের নির্বাচন এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার অবসান ঘটলে বিদ্যমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিরও খানিকটা অবসান হবে বলে আশা করা যায়।
বিডি প্রতিদিন/আশিক