মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সিডিখান এলাকার নতুন চরদৌলত খাঁ গ্রামে আড়িয়াল খাঁ নদীর ভয়াবহ ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। বসতবাড়ি, কৃষিজমি এমনকি প্রিয়জনের কবর পর্যন্ত হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।
৬৫ বছর বয়সী ময়না বেগম নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাদের একসময় সব ছিল। এখন আমরা পথের ভিখারী। কৃষিজমি, ঘরবাড়ি, এমনকি স্বামীর কবরও নদী গিলে নিয়েছে। এখন পরের জায়গায় অস্থায়ী ঘর তুলে কোনোমতে বেঁচে আছি। পাশের বাড়িগুলোও এখন ভাঙনের হুমকিতে। আমাদের আর যাওয়ার জায়গা নেই। আপনারা আমাদের রক্ষা করুন।’
ময়না বেগমের মতো এমন আকুতি করছেন শত শত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।
সরেজমিনে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিডিখান এলাকার পাশ দিয়ে প্রবাহিত আড়িয়াল খাঁ নদীর ভয়াবহ ভাঙনে গত তিন মাসে নতুন চরদৌলত খাঁ গ্রামের শতাধিক পরিবারের ফসলি জমি ও বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছেন—কালাম খাঁ, আবদুর রব বেপারী, নুরুল ইসলাম, শাজাহান বেপারী, মাসুদ বেপারী, রিপন বেপারী, শিপন বেপারী, বাবুল বেপারী, সেলিম বেপারী, হুমায়ুন বেপারী, মোতালেব, হোসেন, সিদ্দিক, লিপি, রেনু বেগম, হুগলি বেগম, মহর কাজী, শেফালীসহ অনেকে।
বর্তমানে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে—নতুন চরদৌলত খাঁ পাকা সড়ক, খানবাড়ি মাদ্রাসা, ৪৪নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নতুন চরদৌলত খাঁ জামে মসজিদ, নতুন চরদৌলত খাঁ প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
নতুন করে ভাঙনের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন দিদার সরদার, ফারুক সরদার, মহাসিন সরদার, নেয়ামুল কাজী, কুলসুম বেগম, সালেহা খানম, সৌরদ্দী হোসেন, রুবেলসহ আরও অর্ধশতাধিক পরিবার।
ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সম্প্রতি স্থানীয় বাসিন্দারা নদীর পাড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। তাঁরা সরকারের কাছে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণসহ জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
সিডিখান এলাকার বাসিন্দা নেয়ামুল কাজী জানান, ‘নদী ভাঙন রোধে অনেকবার প্রশাসনকে জানিয়েছি, কিন্তু কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের বলেন, ‘আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙন রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফ উল আরেফিন জানান, ‘ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের দ্রুত সহায়তা দেওয়া হবে।’
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ