ঝালকাঠি নার্সিং কলেজে ভর্তি ও মাইগ্রেশন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নির্ধারিত ভর্তি ফি ৩৯৬০ টাকা থাকলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৪২৬০ টাকা। সরকার নির্ধারিত ৩৯৬০ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে এবং ৩০০ টাকা নগদ নেওয়া হয়েছে, যার কোন রশিদ দেওয়া হয়নাই। মাইগ্রেশন আবেদন সরকারিভাবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হওয়ার থকালেও সেখানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে জনপ্রতি ১০০ টাকা করে।এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০ জন ছাত্রী কলেজ ছাড়পত্র নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে গেছেন, যেখানে জন প্রতি ছাড়পত্রে আদায় করা হয়েছে ২৫০ টাকা করে।
ঝালকাঠিতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সর্ববৃহত্তর নার্সিং কলেজটি ২০২১ সালে কয়েকজন নার্স শিক্ষক এবং একজন অফিস স্টাফ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ শিক্ষক অন্যত্র বদলি হয়ে যান। এর পরে পদায়ন না হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই সিনিয়র স্টাফ নার্স ও নার্সদের শিক্ষক হিসেবে পদায়ন করায় শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে শিক্ষার্থীরা। এমনকি কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই এই কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে ৪ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন নলছিটি উপজেলা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স গীতা রানী সমাদ্দার। শিক্ষকদের সকাল ৮টায় উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তারা আসেন ৯টা/১০টায়। আড়াইটায় ছুটি হওয়ার কথা থাকলেও ১টা থেকে দেড়টায় চলে যান।
শিক্ষার্থীরা জানান, এই দুর্নীতির নেতৃত্বে রয়েছেন কলেজের তিনজন শিক্ষক নির্মল সরকার, নাদিরা আক্তার ও সুশান্ত মৃধা যারা অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে মিলে একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট তৈরি করে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে এই অর্থ আদায় করছেন।
নাসিং কলেজের শিক্ষার্থদের মধ্যে অধিকাংশই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাদের নির্ধারিত বেতন ও ফি দিতেই হিমশিম খেতে হয়। তার উপরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ভর্তির টাকা জোগাড় করতেই আমাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। এখন ভর্তি, মাইগ্রেশন, ছাড়পত্র—সব জায়গায় টাকা নেওয়া হচ্ছে জোরপূর্বক। আমরা কোথায় যাবো?
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, সরকার যেখানে নার্সিং শিক্ষাকে আধুনিক ও সেবামূলক পেশায় পরিণত করতে নিরলস চেষ্টা করছে, সেখানে কলেজ কর্তৃপক্ষ এই ধরনের অনৈতিক টাকা আদায়ের মাধ্যমে সেই উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মাইগ্রেশন আবেদন ও ছাড়পত্র ফ্রি থাকা সত্ত্বেও টাকা নেওয়া চরম দুর্নীতি। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।
এছাড়াও ঝালকাঠি নার্সিং কলেজে নিয়মিত ক্লাস না হওয়া, নিয়মিত শিক্ষকদের দেরী করে কলেজে আসা ও সময়ের আগেই কলেজ ত্যাগ করার অভিযোগ রয়েছে। নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় তাদের পাঠ্যসূচি অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। ব্যবহারিক ক্লাস ছাড়াই তত্ত্বীয় পড়ালেখার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। অনেক শিক্ষক ক্লাসে এলেও পাঠদানের মান খুবই দুর্বল। তারা বিষয়টি ঠিকভাবে বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। নেট ঘেটে পড়তে বলে চলে যান। ফলে শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্যসেবায় নার্সদের অবদান চিকিৎসকদের পরেই আসে। তাই নার্সিং শিক্ষাকে গুরুত্ব না দেওয়া মানে স্বাস্থ্যব্যবস্থার মূল ভিত দুর্বল করে ফেলা। নার্সিং একটি মানবিক ও কারিগরি পেশা। এখানে শিক্ষকেরা যদি দায়িত্ব এড়িয়ে যান, তাহলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পেশাগত দক্ষতা গড়ে ওঠে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
তবে এসব বিষয় শিক্ষকদের ভয়ে শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে কোন কথা বলতে চান না। তারা বলে এগুলো বললেও কোন লাভ হয়না, এর আগে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে পরিদর্শক এসেছেন আমরা তখন বলছি তারা লিখে নিয়ে গেছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি, এজন্য আর বলতে মন চায় না। এখানে কোন নিয়মকানুন নাই, কোন শৃঙ্খলা নাই। মা বাবা ছেড়ে এখানে লেখাপড়া করতে এসেছি কিন্তু এরকম মেরুদন্ডহীন শিক্ষকদের হাতে পরব বুজিনি। অনেক শিক্ষক আবার নিয়মবহির্ভূতভাবে বেসরকারি নার্সিং কলেজে ক্লাস নিচ্ছেন।
এ বিষয় জানতে চাইলে অধ্যক্ষ গীতা রানী সমদ্দার বলেন, ভর্তিতে কিছু টাকা বেশি টাকা নেওয়া হয়েছে। খরচের কোন কোড না থাকায় রেজুলেশন করে ৩শত টাকা বেশি নেওয়া হয়েছে। তবে মাইগ্রেশন এবং ছাড়পত্রে বেশি টাকা নেওয়ার কথা নয়, যদি নেওয়া হয় আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো। এ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোন জনবল না থাকায় বাহির খেকে লোক এনে কাজ করাতে হয়। কিছু শিক্ষক দূরে থাকায় মাঝে মাঝে একটু দেরী করে আসে। আমরা আরও সচেতন হবো।
বিডি প্রতিদিন/এএ