দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ৮৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৬ কিলোমিটার নির্মাণ করে সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ। কিন্তু মহাসড়কটি সংস্কার ও প্রশস্তকরণের নির্মাণের চার বছর পার হতে না হতেই বিভিন্ন স্থানে উঁচু-নিচু ঢেউ, না হয় গর্তের দেখা মিলেছে। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে ফুলবাড়ী, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট হয়ে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের প্রায় ৬৬ কিলোমিটারের বিভিন্ন স্থানে দেবে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে উঁচু-নিচু ঢেউ, খাল ও গর্ত।
বিশেষ করে পথচারী, মোটরসাইকেলসহ ছোট ছোট যানবাহনসহ অনেক যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলছে। সন্ধ্যার পর মহাসড়কের এসব এলাকা দিয়ে চলাচল করা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা। ফলে মহাসড়কটি যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
দিনাজপুর থেকে গোবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত ব্যস্ততম আঞ্চলিক মহাসড়কটিতে রাজধানী ঢাকাসহ রাজশাহী, বগুড়া, জয়পুরহাট, হিলি স্থলবন্দরসহ সারাদেশ থেকে ছেড়ে আসা দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়গামী সকল যানবহন ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক দিয়ে এসে গোবিন্দগঞ্জ হয়ে এই মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। এ ছাড়াও এই সড়ক দিয়েই দেশের একমাত্র মধ্যপাড়া কঠিন শীলা খনি, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এবং কয়লাভিত্তিক তাপবিদুৎ কেন্দ্রে যাতায়াত করে থাকে। এ কারণে যাতায়াতের এই মহাসড়ক সবসময় ব্যস্ত থাকে।
বিভিন্ন যানের চালক, পথচারী ও স্থানীয়রা জানায়, দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের ফুলবাড়ী ঢাকা মোড় থেকে দক্ষিণে আম্রবাটি মাদ্রাসা মোড়, লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে জয়নগর বাজার, চন্ডিপুর বাজার থেকে দুর্গাপুর ঢিবি, বিরামপুর পৌর শহরের ঢাকা মোড়, মির্জাপুরের ব্র্যাক চিলিং সেন্টার থেকে ঘোড়াঘাট রেলঘুমটি পর্যন্ত কোথাও কোথাও সড়ক উঁচু নিচু ঢেউ হয়ে আছে। পিচ ঢালাই উঠে কোথাও কোথাও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। একই অবস্থা ফুলবাড়ী ঢাকা মোড় থেকে পশ্চিম দিকে রাঙ্গামাটি হয়ে বারাইহাটের কিছু অংশ এবং আমবাড়ী যাওয়ার আগে একইভাবে দিনাজপুর পর্যন্ত।
মোটরসাইকেল চালক সবুর চৌধুরী, ট্রাক চালক আব্বাস আলী বলেন, রাস্তাটি দেবে গিয়ে উঁচু-নিচু ঢেউয়ে নালায় পরিণত হওয়ায় প্রচুর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। নিচু স্থানে চাকা পড়লে নালা থেকে যানবহন সাইট দেওয়া নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। তখন দোষ হয় চালকের। মহাসড়কটি দ্রুত সংস্কার করা দরকার।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান জানান, ওভারলোড গাড়ি চলাচলের কারণে সড়ক এরকম হয়ে থাকে। এরপরেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব থাকে। কাজ শেষে সড়ক সংস্কারে জন্য প্রতিটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য তিন বছর ডিপিএল (ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড) থাকে। এই সময়ে মহাসড়কে এ রকম কোনো সমস্যা থাকলে তা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কার করবে। এই সড়কে ৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পৃথক পৃথকভাবে কাজ করেছে। অনেকেরই চুক্তি শেষে হয়েছে এবং কিছু জায়গায় চুক্তির সময় আছে। সরেজমিন দেখে ঠিকাদারের মাধ্যমে সেই জায়গাগুলো সংস্কার কাজ করা হবে। নইলে সড়ক বিভাগ থেকে শিগগিরই সংস্কার কাজ করা হবে।
উল্লেখ্য, দিনাজপুর সড়ক ও জনপদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই আঞ্চলিক মহাসড়কের গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে গোবিন্দগঞ্জ থেকে দিনাজপুর ১০৬ কিলোমিটার ৪২ ফুট প্রশস্তকরণে ৮৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। রাস্তাটি ৯টি গুচ্ছের মাধ্যমে ৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে নির্মাণ কাজ শুরু করে সংস্কারসহ প্রশস্তকরণ কাজ ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ করে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই