শেরপুরে সরকারি কাজে বাধা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ১২ ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, শেরপুরে দীর্ঘদিন নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও জেলার ৪১টি ইটভাটা পরিচালিত হয়ে আসছিল। সম্প্রতি উচ্চ আদালত সাতদিনের মধ্যে ওই ৪১টি ইটভাটা গুড়িয়ে দিতে প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়। প্রশাসন আদালতের নির্দেশনা পালন করতে মঙ্গলবার ইটভাটায় অভিযান চালায়।
তবে প্রভাবশালী অবৈধ ইটভাটার মালিকরা ইটভাটা বাঁচাতে শ্রমিকদের ব্যবহার করে সড়ক অবরোধের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালতের গাড়ি ভাঙচুর, সড়কে বিশৃঙ্খলা ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে। মঙ্গলবার দুপুরে শহরের খোয়ারপাড় মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাজে ব্যবহৃত পরিবেশ অধিদপ্তরের গাড়িও ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতের নির্দেশে বেশ কয়েকদিন থেকে শেরপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কাজ করছে প্রশাসন। তবে প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঝিনাইগাতি-শেরপুর-জামালপুর মহাসড়ক অবরোধ করে ভাটা শ্রমিকরা।
এদিকে, দুপুর ১টার দিকে পরিবেশ অধিদপ্তর ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বের হওয়ার সময় শহরের খোয়ারপাড় মোড়ে গাড়িগুলো আটকে দেয় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাজে ব্যবহৃত পরিবেশ অধিদপ্তরের গাড়িও ভাঙচুর করে তারা। পরে একটি বড় মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রবেশ করে।
তবে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ায় পুলিশের অনুরোধে মানববন্ধন স্থগিত ঘোষণা করে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে ইটভাটার শ্রমিকরা।
এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের শান্ত করতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডমিন) মিজানুর রহমান ভূঁঞা। পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহমেদ জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
এসময় শেরপুর সেনা ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজর এহসান, শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. জুবায়দুল আলম উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ শ্রমিকদের ও মালিকদের প্রতিনিধি হিসেবে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক সুশীল কুমার দাস জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশে শেরপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে শ্রমিকরা সরকারি কাজে বাধা প্রদান করে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় ১২ জন ইটভাটা মালিকের নামীয় এবং আরও ৭০০ থেকে ৮০০ জন মানুষের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ এনে শেরপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সরকারি কাজে বাধাদানের ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া অভিযোগ পেয়েই আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা সম্ভব হয়নি। গতরাতে আমরা এজাহারভুক্ত পাঁচজন ইটভাটা মালিকের বাসায় গিয়ে তাদের পাইনি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলা খুবই ন্যক্কারজনক বিষয়। মামলার গতিতে মামলা চলবে, সেই সাথে হাইকোর্টের নির্দেশনা পালন করতে অবৈধ ইটভাটার উপর অভিযান চলমান থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই