মেহেরপুরে রঙিন শিশুখাদ্যের রমরমা ব্যবসা চলছে। দোকানপাটে সাজানো শিশুদের লোভনীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে বাহারি রঙের চকলেট, আপেল ও কমলার জুস, বেদানা ড্রিংক, কোমল পানীয়, চিপস, আইসক্রিম। কিন্তু সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে উঠে এসেছে এসব খাবারের অধিকাংশই ভেজাল, অস্বাস্থ্যকর ও ক্ষতিকর রাসায়নিকে ভরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব খাদ্যে ফরমালিন, ট্যালকম পাউডার, পচা ফল এবং ঘন চিনির মিশ্রণ ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে এসব খাবার গ্রহণে শিশুদের কিডনি, লিভার, উচ্চরক্তচাপ এমনকি দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে দেখা গেছে, মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ বাজারে পচা মিষ্টি, মেয়াদোত্তীর্ণ বিস্কুট, রঙিন চকোলেট, আচার, শনপাপড়ি, চিপস, কেক ও আইসক্রিম অবাধে বিক্রি হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর আশপাশের দোকানেও এসব পণ্য সহজেই পাওয়া যায়।
মুজিবনগরের কেদারগঞ্জ, সদর উপজেলার আমঝুপি, বারাদি, শিবপুর, উজলপুর ও কুতুবপুর বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ছোট দোকানগুলোতে রঙিন শিশুখাদ্যের রমরমা ব্যবসা চলছে। স্কুলে যাওয়া কিংবা ফেরার পথে শিশুরা প্রতিদিন এসব পণ্য কিনে খাচ্ছে। আর অজান্তেই ক্ষতি করছে নিজেদের স্বাস্থ্যের।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে অনেক দোকান মালিককে ভেজাল, অস্বাস্থ্যকর ও ক্ষতিকর রাসায়নিকে ভরা পণ্য বিক্রি করায় দণ্ড দিয়েছে। এত কিছুর পরও ভেজাল খাদ্য বিক্রি কমছে না।
মেহেরপুর বড়বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান দিপু বলেন, ‘কম দামের খাবারের ৯০ শতাংশ ক্রেতাই শিশু। রঙিন, মিষ্টি খাবার দিয়ে তাদের আকৃষ্ট করা হয়। মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. রুমানা হেলালী জুসি বলেন, ‘রাসায়নিক মিশ্রিত খাদ্য শিশুদের কিডনি, লিভার ও রক্তচাপের মতো গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাৎক্ষণিকভাবে ডায়রিয়ার ঝুঁঁকিও থাকে।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ মামুনুল হাসান, বলেন, ‘উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা না নিলে সমস্যার সমাধান হবে না।’ জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মো. রিয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘ভেজাল ও রাসায়নিক মিশ্রিত খাদ্য শিশুদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আমরা প্রতিদিন কোথাও না কোথাও অভিযান পরিচালনা করছি।
অনিরাপদ খাদ্য ধ্বংস করছি এবং ব্যবসায়ীদের জরিমানা করছি। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা হচ্ছে।’