পাবনার ফরিদপুরসহ কয়েকটি উপজেলায় শত শত কারখানায় তৈরি হচ্ছে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল। ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা এসব কারখানায় তৈরি জাল বাজারজাতসহ সব কাজকর্ম হয় ভোরে বা রাতে। প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না এসব কারখানা। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার আশায় গোপনে চালিয়ে যাচ্ছে এসব কারখানা। এ এলাকার তৈরি জাল বিক্রি হচ্ছে চলন বিলাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এতে দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। ধ্বংস হচ্ছে জলজ জীববৈচিত্র্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য চায়না দুয়ারি জাল খুবই ক্ষতিকর। এ জাল সূক্ষ্মভাবে মাছসহ জলজ প্রাণী আটকে রাখে। জালের বুননে এক গিঁঠ থেকে আরেক গিঁঠের দূরত্ব খুব কম হওয়ায় মাছ বা অন্য কোনো ক্ষুদ্র জলজ প্রাণী একবার এ জালে প্রবেশ করলে আর বের হতে পারে না। কম পরিশ্রমে চায়না দুয়ারি জালে অধিক পরিমাণ মাছ পাওয়া যায়। এজন্য মৎস্য শিকারিদের কাছে এ জালের চাহিদা বেশি।
স্থানীয়রা জানায়, জেলায় তিন শতাধিক ছোট-বড় কারখানা রয়েছে। এসব কারখানা থেকে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই কোটি টাকার জাল তৈরি করা হয়। যা চলনবিলাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি ভারতেও পাচার করা হচ্ছে। ফরিদপুর উপজেলার ডেমড়া গ্রামে প্রায় ১৫০টি, রতনপুরে ৫০টি, আগপুঙ্গলী গ্রামে ৩০টি, গোপালনগর গ্রামে ৩০টি কারখানা রয়েছে। এ ছাড়া এসব এলাকার সহস্রাধিক বাড়িতেও জাল তৈরির সরঞ্জাম রয়েছে। যেখানে প্রচুর পরিমাণ তৈরি হচ্ছে চায়না দুয়ারি জাল। শুধু জেলার ফরিদপুর উপজেলায়ই নয়, সাঁথিয়া, বেড়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, পাবনা সদর উপজেলায়ও তৈরি হচ্ছে এ জাল। অভিযোগ রয়েছে, সবাইকে ম্যানেজ করেই চালানো হচ্ছে এসব কারখানা।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, মৎস্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষা আইন-১৯৫০ মতে, কোনো ব্যক্তির চায়না দুয়ারি জাল তৈরি, সংরক্ষণ, আমদানি-রপ্তানি, বাজারজাতকরণ, বহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কারখানা মালিক জয়দেব হালদার জানান, চায়না জাল কারখানা আমরা সবাইকে ম্যানেজ করেই চালাচ্ছি। চায়না দুয়ারি জাল তৈরি সমিতির সভাপতি সুশান্ত হালদার জানান, প্রশাসনসহ সবাইকে ম্যানেজ করে আমরা এ কারখানা চালাতাম। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীপক কুমার পাল জানান, আমি এ কর্মস্থলে নতুন এসেছি, অবৈধ চায়না জালের কারখানার বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করেছি। ডিসি মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম জানান, চায়না দুয়ারি জালের বিরুদ্ধে আমি বা আমাদের প্রশাসন সব সময়ই তৎপর। আমরা তথ্য পাওয়ার সঙ্গেই অভিযান পরিচালনা করে সাজা দেওয়ার চেষ্টা করছি। কারখানার সন্ধান পেলে অবশ্যই বন্ধ করা হবে।