উষ্ণতা ও ভয়াবহ দাবানলে বিপর্যস্ত গোটা ইউরোপ মহাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় দ্রুততম হারে উষ্ণ হয়ে উঠছে ইউরোপ। ১৯৯৫ সালের পর থেকে প্রতি দশকে এই মহাদেশের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা বৈশ্বিক স্থলভাগের গড়ের দ্বিগুণেরও বেশি।
এই গ্রীষ্মে ইউরোপজুড়ে উষ্ণতার ভয়াবহ প্রভাব ছিল স্পষ্ট। জুনে উত্তর ইউরোপ ও আগস্টে দক্ষিণ ইউরোপে চলা তীব্র তাপপ্রবাহে দাবানল ছড়িয়ে পড়ে গোটা মহাদেশে।
ইউরোপিয়ান ফরেস্ট ফায়ার ইনফরমেশন সিস্টেম-এর তথ্যানুযায়ী, ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা আগুনে পুড়ে গেছে, যা ২০০৬ সাল থেকে একই সময়ের গড়-এর চারগুণেরও বেশি।
দাবানল ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বলকান, সাইপ্রাস, ফ্রান্স, গ্রিস, পর্তুগাল ও স্পেনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। অনেক ক্ষেত্রে আগুন পৌঁছে গেছে মাদ্রিদ, পোর্তো, পোডগোরিকা এবং গ্রিসের তৃতীয় বৃহত্তম শহর পাতরাসের কাছাকাছি পর্যন্ত। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অন্তত ৮ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে, তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইইউ’র সিভিল-প্রোটেকশন মেকানিজম এর মাধ্যমে সদস্য দেশগুলো রেকর্ড ১৭ বার সহায়তা চেয়েছে, যা মহামারী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সমন্বয় করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
ভৌগোলিক আয়তনের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে পর্তুগাল, যেখানে দেশটির মোট ভূখণ্ডের ২.৯ শতাংশ (২৬০০ বর্গকিমি) আগুনে পুড়ে গেছে।যা গত বছর পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নে আগুনে পুড়ে যাওয়া মোট এলাকার চেয়েও বেশি।
পাশাপাশি স্পেনে ৪ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দাবানলে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ৩০ হাজার বাসিন্দা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি যে অনেক জায়গায় মানবীয় চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব, যা স্বীকার করেছেন স্পেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্গারিটা রবলেস। তিনি বলেন, এখন কেবল আবহাওয়ার অনুকূলতাই আমাদের সাহায্য করতে পারে।
দাবানলের এই ভয়াবহতার পেছনে প্রাকৃতিক কারণ যেমন রয়েছে, তেমনি মানবসৃষ্ট কারণই প্রধান। ইউরোপে দাবানলের কারণ নিয়ে সর্বশেষ গবেষণা অনুযায়ী (২০১৬ সালের তথ্য), মাত্র ৪ শতাংশ দাবানল শুরু হয়েছিল প্রাকৃতিকভাবে, যেমন বজ্রপাত। বিপরীতে ৩৯ শতাংশ ছিল দুর্ঘটনা বা অবহেলা এবং সর্বোচ্চ ৫৭ শতাংশ ছিল ইচ্ছাকৃতভাবে লাগানো আগুন।
২০০১ সালের ইতালির ফরেস্ট পুলিশ বিভাগের একটি গবেষণায় দেখা যায়, ৬০ শতাংশ দাবানল ইচ্ছাকৃতভাবে লাগানো হয়। মানসিকভাবে অসুস্থদের দ্বারা ঘটিত দাবানল ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উদ্দেশ্য ছিল চারণভূমি তৈরি করা, যা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাবানলে রূপ নেয়। আবার অনেক সময় পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়, যাতে জমি পরবর্তীতে নির্মাণযোগ্য এলাকা হিসেবে পুনঃশ্রেণীকরণ করা যায়। সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট, দ্য গার্ডিয়ান
বিডি প্রতিদিন/একেএ