ভয়াবহ শিক্ষক সংকটে চলছে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ। এতে শ্রেণিকার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিটি বিভাগে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষক প্রয়োজন। শিক্ষক নিয়োগে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আবার পদ সৃষ্টি না হওয়ায় নিয়োগ হচ্ছে না দীর্ঘদিন। এতে শিক্ষকসংকট নিয়েই চালাতে হচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম। মানসম্মত ও গুণগত শিক্ষাব্যবস্থায় আদর্শ অনুপাত হিসেবে প্রতি ২৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষকের কথা বলা হলেও চট্টগ্রামের স্বনামধন্য এ প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষকের বিপরীতে ১২০ থেকে ১৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এতে শিক্ষাকার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কলেজে যে পরিমাণ শিক্ষক প্রয়োজন সে পরিমাণ নেই। আমাদের কলেজে এইচএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত শিক্ষার্থী আছে, কিন্তু সে পরিমাণে শিক্ষক নেই। আমাদের প্রায় প্রতিটি বিভাগেই শিক্ষক সংকট রয়েছে। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার কারণে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। প্রতিটি বিভাগে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষক প্রয়োজন কিন্তু বিপরীতে ভূগোলে আছে মাত্র দুজন শিক্ষক, গণিতে সাতজন এবং সমাজবিজ্ঞানে ছয়জন। আসলে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের এতবার বলেছি যে, এখন আর বলার আগ্রহ নেই।’
জানা গেছে, ১৯৭২ সালে শুরু হয় চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পাঠদান। এখন এ বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে শিক্ষার্থী প্রায় ১২ শ। উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতকে (পাস কোর্স) শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ১ হাজার। এর বাইরে কলেজের ১০টি বিভাগের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থী ঐচ্ছ্যিক বিষয় হিসেবে সমাজবিজ্ঞান পড়ে। সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ২০০। এত শিক্ষার্থীকে পড়াতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র পাঁচজন। অর্থাৎ গড়ে ৮৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন। একইভাবে গণিত বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে পাঠদান শুরু হয় ১৯১০ সালে। বর্তমানে বিভাগটির স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১২ শ। এর বাইরে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক (পাস কোর্স), ঐচ্ছ্যিক বিষয় হিসেবে গণিত পড়ানো হয় আরও প্রায় ১৮ শ শিক্ষার্থীকে। সবমিলিয়ে বিভাগের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। তবে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র পাঁচজন। চট্টগ্রাম কলেজের প্রতিটি বিভাগেই এমন ভয়াবহ শিক্ষক সংকট চলছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক মিলিয়ে ১৫৭টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে শূন্য রয়েছে ২২টি পদ। ১৩৫ জন শিক্ষক দিয়েই চলছে ১৬ হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান। কলেজের শূন্য পদ যেমন পূরণ হচ্ছে না তেমনি চাহিদা অনুযায়ী নতুন পদও সৃষ্টি হচ্ছে না।