নদী, পাহাড়, সাগরবেষ্টিত চট্টগ্রামকে বলা হয় প্রকৃতিকন্যা। এই কন্যার সঙ্গী তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়িও অপরূপা। মানচিত্রের সর্বদক্ষিণে তাকালে মনে হবে স্নানমগ্ন এই চার কন্যার দুঃখজল মুছে যাচ্ছে কক্সবাজারে নোনাজলে। প্রকৃতি মোহনীয় করে সাজিয়েছে প্রাচ্যের রানি খ্যাত চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকা। এর বাইরেও ঝরনা, হ্রদ, দ্বীপ, উপত্যকা ঘেরা অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চল নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এরপরও দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এই জনপদ যেন পর্যটনে পিছিয়ে। জানা গেছে, কেবল চট্টগ্রাম জেলাতেই আছে পতেঙ্গা, পারকি, গুলিয়াখালীসহ একাধিক সমুদ্রসৈকত। কক্সবাজারে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, সেন্ট মার্টিন ছাড়াও মেরিন ড্রাইভে আছে অপরূপ মনোহর দৃশ্য। বান্দরবানের থানচি-নীলগিরিতে পাহাড় ও মেঘের মিতালী, বগালেক; রাঙামাটির কাপ্তাই লেক, সাজেক; খাগড়াছড়ির আলুটিলাসহ বেশ কিছু পর্যটন স্পট রয়েছে। এ ছাড়াও এই পাঁচ জেলায় রয়েছে ছোট-বড় সরকারি-বেসরকারি কৃত্রিম-প্রাকৃতিক দুই শতাধিক পর্যটন স্পট। এই অঞ্চলে পূর্বে সবুজের চাদরে মোড়া পাহাড়ের সঙ্গে মেঘের মিতালী, শরতে সুনীল আকাশ, কেওক্রাডংয়ের মতো বিখ্যাত পর্বতশৃঙ্গ, পশ্চিমে উত্তাল সমুদ্র, আর চট্টগ্রামের পেট চিড়ে কর্ণফুলীতে সাম্পান ও ছোট-বড় জাহাজের ভেসে চলা, বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক ঝরনা, কাপ্তাই, মহামায়া, ভাটিয়ারির মতো অপরূপ হ্রদ; হালদা, শঙ্গ, সাঙ্গুর মতো আঁকাবাঁকা অর্ধশতাধিক নদনদী দেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণের এই জনপদগুলোকে অপরূপ রূপে রাঙিয়ে দিয়েছে। বিশ্ব পর্যটন সংস্থা (ডব্লিওটিটিসি) হিসেবে ২০২৪ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে পর্যটনশিল্পের অবদান ছিল ১১ ট্রিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার বেশি এবং বৈশ্বিক জিডিপির ১০ শতাংশ।
এই শিল্পে বিশ্বব্যাপী কাজ করছে সাড়ে তিন কোটি মানুষ এবং এর উল্লেখ্যযোগ্য অংশই অভ্যন্তরীণ পর্যটন থেকে এসেছে। ২০১৯ সালের করোনা মহামারির পর সারা বিশ্বে পর্যটনশিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই খাতের আকার দিনদিন বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে পর্যটনের জন্য সবচেয়ে অনুকূল প্রকৃতি ও আবহাওয়া বিদ্যমান দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে। কিন্তু এই অঞ্চলের পর্যটনশিল্প যতটুকু বিকশিত হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। এত এত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও নানা কারণে দেশিবিদেশি পর্যটক ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে না পারা, নিরাপদ ও দ্রুত যাতায়াত এবং কম খরচে আবাসন নিশ্চিত করতে না পারা, খাবার ও বিনোদনে খরচ কমাতে না পারা, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি না হওয়া, ব্যাংকঋণের অপ্রতুলতা, পাহাড়ে ভূমি জটিলতা ও সর্বোপরি পর্যটন অনুকূল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে না পারায় এই খাতে আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং, কনটেন্ট ক্রিয়েটিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নর্থ আমেরিকা ও এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ পর্যটনের প্রচারে গুরুত্ব দিলেও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এ কারণে বিদেশি পর্যটক এবং বিনিয়োগকারী কাউকেই বাংলাদেশে আগ্রহী করে তোলা যাচ্ছে না।