বছরের পর বছর ধরে সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন প্রদর্শন করছেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার অধুনা গ্রামের বাসিন্দারা। পাশাপাশি মসজিদ ও মন্দিরে দুই ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মীয় আচার-আচরণ পালন করছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অধুনা গ্রামের সেনের হাট বাজার জামে মসজিদের ১০ ফুট দূরত্বে সর্বজনীন দুর্গামন্দির। প্রতিবছরের মতো এবারও দুর্গাপূজা হয়েছে। স্থানীয় মুসলিম নর-নারীরা প্রতিবেশী হিন্দুদের পূজা উদ্যাপনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। দুর্গাপূজার সময় মন্দির থেকে ভেসে আসে ঢাকঢোল, উলু, শঙ্খধ্বনি আর সন্ধ্যায় হয় আরতি অনুষ্ঠান। তবে মসজিদে আজান শুরু হলেই নীরবতা বজায় রাখেন পূজারি, ভক্তরা। নামাজ শেষ হলেই আবার শুরু হয় পূজার্চনা।
মন্দিরের পূজারি স্বপন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, মসজিদে আজান শুরু হলেই আমরা পুরো অনুষ্ঠানের বিরতি দেই। নামাজ শেষে আবার আমাদের কার্যক্রম শুরু করি।
আমাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ এ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এখানে কেউ কারও জন্য বিরক্তির কারণ হননি কখনই। বরং দুই ধর্মের অনুসারীরা আগলে রেখেছেন তাদের এই পবিত্র দুটি স্থান।
স্থানীয় বাসিন্দা মাকসুদ মৃধা জানান, এখানে সবাই মিলেমিশে নিজ নিজ ধর্মীয় আচার পালন করছেন। আমাদের পূর্ব-পুরুষরাও এমনটিই করেছেন। ঈদে কিংবা বিয়ের অনুষ্ঠানেও আসেন হিন্দু প্রতিবেশীরা।
মন্দির কমিটির সভাপতি শংকর চন্দ্র দাস বলেন, ১৯৭২ সালে আধুনা সেনের বাড়ি সর্বজনীন দুর্গামন্দির স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে একই মাঠে আধুনা জামে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। মন্দিরের মাত্র দশ ফুট দূরত্বে অবস্থিত জামে মসজিদে মুসলমান ধর্মের লোকজন তাদের ধর্ম পালন করে আসছেন। আমরা মন্দিরে আমাদের ধর্ম পালন করে আসছি। মসজিদ-মন্দির পাশাপাশি হলেও আমাদের কোনো সমস্যা নেই।
আধুনা শেনের বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা কামরুল ইসলাম বলেন, এখানে ধর্ম নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি নেই। মসজিদে আজান হলেই হিন্দু ভাইয়েরা ঢাকঢোলের আওয়াজ বন্ধ রাখেন। আজান-নামাজ শেষ হলেই আবার তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। বছরের পর বছর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে এখানে যে যার ধর্ম পালন করেন। কেউ কারও প্রতি বিন্দুমাত্র বিরক্তির কারণ হয়নি কখনো।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইব্রাহীম বলেন, উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের আধুনা গ্রামের একই স্থানে মসজিদ-মন্দির অনেক বছর ধরে ওই এলাকায় সম্প্রীতির শিক্ষা ছড়িয়ে যাচ্ছে। যা আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ।