শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়ে গেছে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির বহুল প্রত্যাশিত ঢাকা সফর। এতে হতাশ ইতালির ভিসাপ্রত্যাশী ও ইতালিপ্রবাসী কয়েক হাজার বাংলাদেশি। ভিসা সমস্যার সমাধান, অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা লাভ এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ইতালির সম্পর্ক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছিলেন তারা। শেষ মুহূর্তে সফর বাতিল হওয়ায় ভেঙে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, শুধু বাংলাদেশ নয়, এ অঞ্চলে আরও চার দেশে একসঙ্গে সফর করার কথা ছিল ইতালির প্রধানমন্ত্রীর। যাওয়ার কথা ছিল সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে। সবগুলোই আপাতত বাতিল করেছেন তিনি। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান সংলাপকে কেন্দ্র করে ন্যাটো মিত্র ইউরোপের নেতাদের ধারাবাহিক বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন মেলোনি। এ ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এত দীর্ঘ সফর আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলেই এশিয়ার পাঁচটি দেশে সফরের পুরো কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করেছেন তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে মেলোনির আগামী ৩০ আগস্ট দুই দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল। কথা ছিল পরদিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। সেই হিসেবে এই ভিভিআইপি সফরের সব প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্বে নতুন রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু হওয়ায় তাকে এশিয়ার সফরসূচি আপাতত বাতিল করতে হয়। এ নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করে সফরের নতুন সূচি নির্ধারণ করা হবে।
জানা গেছে, ইতালিতে বর্তমানে প্রায় ৪৫ হাজার বাংলাদেশি অবৈধভাবে বসবাস করছেন। পাশাপাশি স্পন্সর ভিসায় ইতালি যাওয়ার জন্য দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রায় ২০ হাজার ভিসার আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে দীর্ঘদিন। আশা করা হচ্ছিল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির বৈঠকে বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। এ বৈঠক ঘিরে আশায় বুক বেঁধেছিলেন হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি ও ইতালির ভিসাপ্রত্যাশীরা। তবে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সফর বাতিল হওয়ায় হতাশ এসব প্রবাসী।
এদিকে ইতালি বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। দেশটিতে প্রায় আড়াই লাখের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করেন। টানা পঞ্চমবারের মতো দেশটিতে বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স প্রেরণকারী হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে ও ইতালির ব্যবসায়িক লেনদেন বছরে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি, যা দিন দিন আরও বাড়ছে। তাই ইতালি প্রবাসীরা অবৈধদের বৈধকরণ এবং ঢাকায় আটকে থাকা ভিসা সমস্যার সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।