বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে সংস্থাটির কর্মচারীরা। এর সঙ্গে ঢাকাবাসীর ব্যানারে নগর ভবনে একত্রিত হয়েছে ইশরাকের অনুসারীরা। তারা মূল ফটক আটকানোর পাশাপাশি ডিএসসিসি সব বিভাগের অফিস গেটে তালা ঝুলিয়ে রেখেছে। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের নাগরিকসেবা।
গতকালও স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল ছিল নগর ভবন। নগর ভবনের ভিতরের ফটকের সিঁড়িতে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। সমর্থকরা বলেন, কী কারণে মেয়র হিসেবে ইশরাক ভাইয়ের শপথ পড়ানো আটকে আছে, আমাদের জানা নেই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নগর ভবনের সব সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাব। ১৮ দিন ধরে বন্ধ ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয়সহ ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়। ভেঙে পড়েছে নগর সেবা কার্যক্রম। ওয়ার্ড কার্যালয়ের মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে বর্জ্য অপসারণসহ জরুরি কিছু সেবা সচল রাখা হয়েছে। সড়ক বাতি প্রজ্বালন, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন, মশার ওষুধ ছিটানোসহ প্রায় ৩০ ধরনের সেবাই ব্যাহত হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা জানান, অফিস বন্ধ থাকায় সব ধরনের সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
জন্মমৃত্যু ও তালাক নিবন্ধন, হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিল তুলতে পারছে না। সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর বিল জুনের মধ্যে দিতে না পারলে তা সরকারি কোষাগারে ফেরত গেলে জটিলতা বাড়বে। কোরবানি বর্জ্য অপসারণের জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, তা নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। হাট ব্যবস্থাপনাসহ সেবা স্বাভাবিক করতে নগর ভবন খুলে দেওয়া প্রয়োজন হলেও কবে খুলবে তা কেউই বলতে পারছে না।
সিটি করপোরেশনের সেবার পরিমাণ ৩০ বা তার চেয়েও বেশি। আনুষ্ঠানিক সেবার পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক বিভিন্ন সেবাও দিয়ে থাকে ডিএসসিসি। গুরুত্বপূর্ণ সেবার তালিকায় রয়েছে-সড়কের বৈদ্যুতিক বাতি, হাসপাতাল, রাস্তা-নর্দমা-ফুটপাত উন্নয়ন ও সংস্কার, বাজার ব্যবস্থাপনা, জন্ম-মৃত্যু-তালাক নিবন্ধন, মশক নিধন, আবর্জনা পরিষ্কার, কবর বা সৎকার, ব্যায়ামাগার, কমিউনিটি সেন্টার, মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র, সড়কে পার্কিং, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসা, গ্রন্থাগার, সংগীত ও স্কুল, বাস টার্মিনাল, পাবলিক টয়লেট, পার্ক এবং খেলার মাঠ ইত্যাদি। ডিএসসিসির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিন নগর ভবনের প্রধান কার্যালয়সহ অঞ্চলগুলোতে অন্তত ১০ হাজার মানুষ আসেন সেবা নিতে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে অস্থায়ী পশুর হাট ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বড় চ্যালেঞ্জ। সেসব মোকাবিলায় যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার ছিল তা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তারা দ্রুত এই আন্দোলনের অবসান চান।
গত ২৭ মার্চ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল ও ঢাকা প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন। ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন তাকে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশ করে। তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সেই গেজেট বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি। ২৯ মে আপিল বিভাগ ইশরাক হোসেনের শপথ ঠেকাতে করা আপিল খারিজ করে দেন। সেদিন নগর ভবনের অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, উচ্চ আদালতের রায় মেনে অবিলম্বে শপথ আয়োজন করুন। এটি সরকারের প্রতি আমার শেষবারের মতো আহ্বান।