রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবন ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টারের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল না। ভবন নির্মাণের সময় ‘ফায়ার সেফটি প্ল্যান’ পাস করিয়ে নেওয়া হলেও ভবনে এর আলমত পাওয়া যায়নি। বেসমেন্টে যেখানে আগুন লেগেছিল সেখানেই ছিল ১৭টি গ্যাস সিলিন্ডার। সেগুলো বিস্ফোরিত হলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। যদিও আগুনে ভবনের নিচ তলার কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎহীন রয়েছেন ভবনের বাসিন্দারা। আগুনের ঘটনার পর ভবনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্র্নেল তাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথ ছিল না। ভবনের নকশা সঠিক রয়েছে কি না এ বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ভবন মালিকের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। তবে এখনো তিনি সেগুলো সরবরাহ করেননি।
ফায়ার সার্ভিস, ভবনের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভবনটি ১৭ তলা। এর মালিক বশির উদ্দীন। ভবনটি ব্যবসায়িক ও আবাসিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নিচ তলা থেকে সাত তলা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। একটি ফ্লোরে রয়েছে রেস্টুরেন্ট। বাকি তলাগুলো আবাসিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অর্ধশতাধিক পরিবার বসবাস করেন সেখানে।
গতকাল সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা যায়, ভবনটিতে বহিরাগত কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারেন, সেজন্য পাহারা বসিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। পাহারার দায়িত্বে থাকা রমনা থানা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ভবনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো চালু হয়নি। তবে ব্যবসায়ীরা এসে দোকান খুলছেন। যাদের দোকানের সমস্যা হয়েছে তারা সেগুলো মেরামত করছেন।
ভবনটির বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী নুর মোহাম্মদ বলেন, অফিস শেষে মাত্র বাসায় এসেছি। তখনই আগুন লাগার খবর পাই। অসুস্থ মাকে নিয়ে খুব আতঙ্কে নিচে নেমে আসি। সারারাত আতঙ্কে ঘুমাতে পারিনি। বাসায় রান্না হয়নি।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইন স্টাইল বাই রাইস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিকট শব্দ শুনতে পেয়ে ভয়ে ব্যবসায়ীরা বাইরে বেরিয়ে আসেন। শুরুতে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে থাকা ফায়ার ডিস্টিংগুইসার দিয়ে তারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এসে আগুন নেভানোর কাজ করেন। আগুনের ধোঁয়া তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে কিছু কাপড় নষ্ট হয়েছে। বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি।
গত সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ভূ-গর্ভস্থ (বেসমেন্ট) তলায় আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ভবনটি থেকে ১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। ওই ভবনে বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁয় নানা বয়সি মানুষ রাতের খাবার খাওয়ার সময় আগুন লাগে। তখন ভবন থেকে বের হওয়ার সুযোগ না পেয়ে ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে বেশির ভাগ মানুষের মৃত্যু হয়।