চার পটে থাকা ১২ দলের মধ্যে বাংলাদেশই র্যাঙ্কিংয়ের তলানিতে। নারী এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করা দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ঠিক ওপরের ধাপে থাকা ভারতের সঙ্গে র্যাঙ্কিংয়ের ব্যবধান ৫৮! ভারত ৭০ নম্বরে। বাংলাদেশ ১২৮ নম্বরে। নারী ফুটবলের র্যাঙ্কিংয়ে দুস্তর ব্যবধানের পরও অসাধ্য সাধন করেছেন আফঈদা খন্দকাররা। একে একে সব বাধা পেরিয়ে স্থান করে নিয়েছেন মূল পর্বে। গতকাল অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে চূড়ান্ত পর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই ড্রয়ে বি গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নিশ্চিত হয়েছে উত্তর কোরিয়া, চীন ও উজবেকিস্তান।
এশিয়ার নারী ফুটবলে সব সময়ই আধিপত্য দেখিয়েছে চীন। নারী এশিয়ান কাপে আগের ২০টি টুর্নামেন্টে ৯ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চীন। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নও চীনা মেয়েরাই। গতবার (২০২২ সালে) ভারতে অনুষ্ঠিত নারী এশিয়ান কাপের ফাইনালে চীন ৩-২ ব্যবধানে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত টানা সাতবার এশিয়ান কাপ জয় করেছে চীনা মেয়েরা। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে সফল দলের তালিকায় চীনের ঠিক পরেই আছে উত্তর কোরিয়া। তারা তিনবারের চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশকে বি গ্রুপে এ দুটি দলের বিপক্ষে খেলতে হবে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে চীনের বর্তমান অবস্থান ১৭। উত্তর কোরিয়া আরও ওপরে (৯ নম্বরে)। এমনকি উজবেকিস্তানের র্যাঙ্কিংও ৭৭ ধাপ ওপরে (৫১ নম্বরে)! ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে তাই বাংলাদেশের হারাবার তেমন কিছু ছিল না। সব দলই বাংলাদেশের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে। কঠিন গ্রুপে পড়ার পরও নিশ্চয়ই আফঈদারা আনন্দিত। এশিয়ান কাপের মতো আসরে খেলাটাই তো বিরাট ব্যাপার। নারী জাতীয় দলের কোচ পিটার বাটলার ড্রয়ের পর বলেছেন, ‘চীন এবং উত্তর কোরিয়া ম্যাচ অনেক কঠিন হবে। তবে অনেক কিছুই হতে পারে।’ বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতিই নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি। সম্ভব হলে বড় দলের বিপক্ষে খেলে নিজেদের প্রস্তুত করতে চান বাটলার।
এশিয়ান কাপের এ গ্রুপে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও ফিলিপাইন খেলবে। এ ছাড়া সি গ্রুপে খেলবে জাপান, ভিয়েতনাম, ভারত ও চীনা তাইপে।
বাছাই পর্বে সি গ্রুপে বাংলাদেশ খেলেছে মিয়ানমার, বাহরাইন এবং তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে। তিনটি ম্যাচেই দারুণ জয় পেয়েছে মেয়েরা। বাহরাইনকে ৭-০, মিয়ানমারকে ২-১ এবং তুর্কমেনিস্তানকে ৭-০ ব্যবধানে পরাজিত করেছে বাংলাদেশ। পূর্ণ ৯ পয়েন্ট সংগ্রহ করে গ্রুপসেরা হয়েছে। প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করেছে এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্ব। আগামী বছরের মার্চে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারী এশিয়ান কাপ। সেখানে প্রবল শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করতে হবে বাংলাদেশকে। কী অপেক্ষা করছে পিটার বাটলারদের সামনে!
সামনের বছর ১ থেকে ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে নারী এশিয়ান কাপ। বাংলাদেশ শুরুতেই মুখোমুখি হবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন চীনের। ৩ মার্চ ওয়েস্টার্ন সিডনি স্টেডিয়ামে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। ৬ মার্চ উত্তর কোরিয়ার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশের মেয়েরা। একই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি। ৯ মার্চ পার্থ রেক্টেঙ্গুলার স্টেডিয়ামে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে উজবেকিস্তানের।
বাংলাদেশের মেয়েরা এক দশক ধরেই নানা ধরনের সফলতা উপহার দিয়ে যাচ্ছেন ফুটবলে। একসময় বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় সীমাবদ্ধ ছিল সফলতা। বর্তমানে জাতীয় দলও ট্রফি উপহার দিচ্ছে নিয়মিত। নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ।
চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের নিয়ে পুরো দেশই আনন্দ উৎসব করেছিল। বহু বছর পর ফুটবলে বাংলাদেশ দেখেছিল খুশির জোয়ার। দক্ষিণ এশিয়ার সীমানা পেরিয়ে এবার এশিয়ান ফুটবলেও নিজেদের পদচিহ্ন আঁকতে যাচ্ছেন আফঈদা খন্দকাররা।