দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ প্রথমবারের মতো ৫ লাখ কোটি টাকার সীমা অতিক্রম করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, অনেক ব্যবসা খাতে মন্দা এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংকটও এ ঋণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, মালিকরা কেউ জেলে বা পলাতক, কেউ লোকসানে পড়েছেন। ফলে ব্যাংকের প্রত্যাশামতো ঋণ আদায় হচ্ছে না। সেইসঙ্গে খেলাপি ঋণ গোপনের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়াও এর কারণ।
আগে অনেক ঋণগ্রহীতা কিস্তি না দিয়েও নানা সুবিধা নিয়ে ঋণ নিয়মিত দেখাতে পারতেন। কিন্তু এখন আদায় ছাড়া ঋণ নিয়মিত দেখানোর সুযোগ নেই। ঋণ শ্রেণিকরণেও নতুন কঠোর নিয়ম চালু হয়েছে। আগে ছয় মাস পর যেটিকে খেলাপি ধরা হতো, এখন ঋণের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরদিন থেকেই তা মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশ। তিন মাস আগের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা এবং এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা, যা প্রবৃদ্ধির হার ১৫১ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুনে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের জুনে বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আগে যেসব ঋণ গোপন রাখা হতো, এখন সেগুলো খেলাপি দেখানো হচ্ছে। এতে খেলাপি ঋণ হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। এর ফলে ব্যাংকের তারল্য সংকটে পড়ছে, প্রভিশন সংরক্ষণের চাপ বাড়ছে এবং মুনাফা কমে যাচ্ছে।’
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন কঠোর নীতির কারণে এখন বাস্তব চিত্র উঠে আসছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে ঋণ পুনঃতফসিল ও বিভিন্ন ছাড় দিয়ে তা কম দেখানোর সুযোগ ছিল। তবে এখন সেই পথ বন্ধ হওয়ায় প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে।