জুলাই সনদের জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক ইস্যুতে একমত হতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে দেনদরবার চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর। মৌলিক বেশ কয়েকটি ইস্যুতে এখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলছে সংলাপ। হচ্ছে বিতর্ক, দেখা যাচ্ছে বিভেদ। এর মধ্যেও হাল ছাড়ছে না জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। মোটাদাগে ২০টি বিষয়কে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে ১২টিতে ঐকমত্য হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বাকি আটটি মৌলিক বিষয় নিয়ে চলছে দেনদরবার। চূড়ান্ত জুলাই সনদে স্থান দিতেই এই প্রচেষ্টা। কমিশনের এই প্রচেষ্টা কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন তুলেছে রাজনৈতিক দলগুলো।
তারা বলছেন, যে আটটি মৌলিক ইস্যু নিয়ে কমিশন এগোচ্ছে সেগুলোতে একমত হওয়া অনেক কঠিন ব্যাপার। কারণ এসব ইস্যুর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শগত বিষয় জড়িত। এখনো ঐকমত্য না হওয়া এই ৮টি বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ চারটি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপদ্ধতি, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন, উচ্চকক্ষের নির্বাচনপদ্ধতি ও ক্ষমতা, সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বাড়ানো ও নির্বাচনপদ্ধতি, রাষ্ট্রপতির নির্বাচনপদ্ধতি, রাষ্ট্রের মূলনীতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা, সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব।
আজ ও আগামীকাল এসব ইস্যু নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখতে চায় বলে জানিয়েছে কমিশন। এ প্রসঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে যেগুলোতে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো বৃহস্পতিবারের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দিতে পারব। তার সঙ্গে এ পর্যন্ত (দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ) যেগুলো ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো সংযুক্ত করে সনদের জায়গায় পৌঁছাব।’
তিনি বলেন, ‘৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আমরা যেভাবে হোক সনদের চূড়ান্ত রূপ অন্ততপক্ষে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো স্পষ্ট করতে হবে এবং সনদে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কমিশন দেনদরবারের মাধ্যমে এখন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে মৌলিক কিছু বিষয়ে একমত হতে। তবে এটা কিছুটা কঠিন বলে মনে করি।’ তিনি বলেন, সময় তো আর বেশি নেই। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।
এ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশন ১২টি বিষয়ে ঐকমত্যে এসেছে বলে জানিয়েছে। এগুলো হলো সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান, বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ (ক) সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, (খ) উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালতের সম্প্রসারণ, জরুরি অবস্থা ঘোষণার কাঠামো, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সংবিধান সংশোধন, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ-সংক্রান্ত বিধান, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল ও পুলিশ সংস্কার কমিশন।
এরই মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদের একটি খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়ায় সাত দফা অঙ্গীকার উল্লেখ করা হয়েছে। এসব অঙ্গীকার-সংবলিত জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, এই সনদ ঘোষণার পর জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হবে, সেই সরকারকে দুই বছরের মধ্যে সুপারিশকৃত সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। এরই মধ্যে কমিশনের এ উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করেছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
এর আগে ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম পর্বে (২০ মার্চ-১৯ মে) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পৃথক আলোচনা করে কমিশন। প্রথম পর্বে ঐকমত্য হয়নি এমন ২০টির মতো মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে গত ৩ জুন থেকে সব দলকে একসঙ্গে নিয়ে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শুরু করে ঐকমত্য কমিশন।