সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যা সাতটা। হর্ন বাজিয়ে দ্রুতবেগে ছুটে যাচ্ছে সাদা রংয়ের একটি মাইক্রোবাস। সেই মাইক্রোবাসটিকে ধাওয়া করছে আরেকটি মাইক্রোবাস। বিষয়টি বুঝতে পেরে স্থানীয়রা প্রথমে থাকা মাইক্রোবাসটিকে ব্যারিকেড দিয়ে আটকায়। এ সময় মাইক্রোবাস থেকে স্থানীয়দের জানানো হয় তারা র্যাবের সদস্য। পেছন থেকে আসা আরেকটি মাইক্রোবাস এসে থামে। তারাও পরিচয় দেয় র্যাব সদস্য হিসেবে।
এ সময় স্থানীয়রা দু’টি মাইক্রোবাসের সদস্যদের জেরা করতে শুরু করেন। দুই মাইক্রোবাসের সদস্যরা একে অপরকে ভুয়া র্যাব সদস্য বলে প্রচার করেন। এ সময় দ্বিতীয় মাইক্রোবাসে থাকা আসল র্যাব সদস্যরা প্রথম মাইক্রোবাসে থাকা ডাকাতির সাথে জড়িত ভুয়া র্যাব সদস্যদের আটক করতে গেলে বাঁধে বিপত্তি। স্থানীয়রা ভুল বুঝে আসল র্যাব সদস্যদের মারধর শুরু করে।
বিষয়টি পরে জানার পর ভুয়া র্যাব সদস্যদের বেদম ভাবে প্রহার করে বিক্ষুব্দ জনতা। এ সময় তারা ভুয়া র্যাব সদস্যদের মাইক্রোবাসটিও ভাংচুর করে। ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের জয়বাংলা মোড়ে এ ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয় একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দূর থেকে তারা দেখতে পান একটি মাইক্রোবাস দ্রুতবেগে হুইসেল বাজিয়ে খুলনার দিকে যাচ্ছে। এ সময় আমরা মাইক্রোবাসটিতে থামাই। প্রথমে মনে করেছিলাম মাইক্রোবাসটি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আরেকটি মাইক্রোবাস এসে ঘটনাস্থল থেকে প্রথম মাইক্রোবাসে থাকা লোকজনদের আটক করতে যায়। দুই মাইক্রোবাসের সদস্যরাই র্যাব পরিচয় দেয়। এ সময় স্থানীয়রা ভুল বুঝে ডাকাত সন্দেহে তাদের উপর হামলা করে। পরে নগরকান্দা থানা পুলিশ এসে আসল র্যাব সদস্যদের বিষয়টি স্থানীয়দের জানালে তখন ভুয়া র্যাব সদস্যদের মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে বেদমভাবে প্রহার শুরু করে। পরে র্যাব সদস্য ও পুলিশের সহায়তায় ভুয়া র্যাব সদস্যদের জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
মারপিটের শিকার হওয়া আটক ভুয়া র্যাব সদস্যরা হলেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ছাব্বিশপাড়া গ্রামের স্বপন খান (৪৪), চাঁদপুর জেলার মদনা গ্রামের মিন্টু গাজী (৪৫), গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কুনসিবাড়ী গ্রামের সাইফুল ইসলাম (৩২), মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার আন্ডারচর গ্রামের মো. জামিল (৩২) ও ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার হিদাডাঙ্গা গ্রামের দিদার (২৯)। তারা সবাই আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। আটককৃত পাঁচ জনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতি, হত্যা, দস্যুতাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক আমিরুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরার দুই স্বর্ণ ব্যবসায়ী ঢাকা থেকে বাগেরহাটে যাবার পথে তাদের বাস থেকে নামিয়ে ভুয়া র্যাব সদস্যরা একটি মাইক্রোবাসে করে নিয়ে খুলনার দিকে যাচ্ছিল। সেই মাইক্রোবাসটিকে ধাওয়া করছিল আসল র্যাব সদস্যরা। পথিমধ্যে নগরকান্দার জয়বাংলা মোড়ে মাইক্রোবাসটিকে আটকায় স্থানীয় জনতা।
র্যাব-১০ ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার তারিকুল ইসলাম জানান, র্যাব-১৩ এর হেডকোয়ার্টার থেকে একটি টিম ডাকাত দলকে ধাওয়া করে। এ সময় নগরকান্দার জয়বাংলা মোড়ে স্থানীয়দের সাথে ভুল বোঝাবুঝি হলে আসল ও ভুয়া র্যাবের উপর চড়াও হয় স্থানীয়রা।
তিনি বলেন, কয়েকজন র্যাব সদস্য সাদা পোশাকে থাকায় তাদের চিনতে ভুল করে স্থানীয়রা।
তিনি আরো জানান, ডাকাতির সাথে জড়িত ভুয়া র্যাব সদস্যদের কাছ থেকে র্যাবের পোশাক, হাতকড়া, ওয়াকিটকি ও খেলনা অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত