চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে কোনো অসাধ্য সাধন করা সম্ভব। তরুণরা বাধা ডিঙাতে পারে, তরুণরা জয় করতে জানে। বাংলাদেশের তরুণরা দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এবং সর্বশেষ ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে দেখিয়ে দিয়েছে, তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হলে, তাদের অবহেলা করা হলে, তাদের দমনের চেষ্টা করা হলে, তারা রুখে দাঁড়াতে জানে, তারা পাথরকে ভেঙে চুরমার করতে পারে। এই তারুণ্যের শক্তিতেই আগামীর বাংলাদেশ বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করবে।
শনিবার বিকালে চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড়স্থ প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির সেন্ট্রাল অডিটোরিয়ামে যুব নেতৃত্বভিত্তিক সংগঠন ইয়ুথ ভয়েস অব বাংলাদেশ’র চট্টগ্রাম সিটি ওয়ার্কিং কমিটির জেনারেল কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তরুণদের উদ্দেশে দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও ইতিবাচক মনোভাব ধারণের আহ্বান জানিয়ে ডা. শাহাদাত বলেন, এই বাংলাদেশকে বদলে দিতে হলে নেতৃত্ব দিতে হবে তরুণদের। যুগে যুগে তরুণরাই দেশের সব বিপ্লবে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে তারুণ্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সব ক্ষেত্রেই তরুণরাই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। জুলাই আন্দোলনেও তারুণ্যরা নেতৃত্ব দিয়েছে। আগামীতেও দেশ গঠনে এগিয়ে আসবে তারুণ্যরা।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন হযরত মোহাম্মদ (সা.) তরুণ বয়সে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন শুরু করেছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তরুণ বয়সে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন এবং বেগম খালেদা জিয়াও গৃহবধূ থেকে রাজপথে এসে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে। তারুণ্য আর আপসহীন নেতৃত্বই দেশকে রক্ষা করেছে।
মেয়র বলেন, আজকের বাস্তবতায় আমাদের তরুণ সমাজের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দেশপ্রেম ধারণ করা। তারা যেন শুধু সমালোচনা না করে, সমস্যা সমাধানের চিন্তা করে। টরেন্টো সফরে সেখানে পড়াশোনা করা তরুণদের বলেছি, তোমরা শিক্ষা অর্জনের পর দেশের টেকনোলজি ট্রান্সফার করো। বাংলাদেশকে ভালোবেসে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ তরুণ রয়েছে। তাদের অনেকেই বিদেশে যাওয়ার চিন্তা করছে। কারণ তারা মনে করে বাংলাদেশ নিরাপদ নয়। আমাদের দায়িত্ব হলো এই মনোভাব পরিবর্তন করা। তরুণদের মধ্যে দেশপ্রেম ও সততা জাগিয়ে তুলতে হবে।
এবারের সম্মেলনে চট্টগ্রামের ৪২টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্বাচিত ১৪৫ জন মেধাবী তরুণ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আগত প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থীও এই সম্মেলনে অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন উদীয়মান আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তা ও সমাজকর্মীরা, যারা আগামীর উন্নত, মানবিক ও নেতৃত্বগুণে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন বুকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছেন।
ইয়ুথ ভয়েস অব বাংলাদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার তারেক আকবর খোন্দকারের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. ফরিদ এ সোবহানী। বিশেষ বক্তা ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আইন কর্মকর্তা (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) ব্যারিস্টার শাহনেওয়াজ মুনির ও বিএনপি চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি কমিটির সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. মুনিরা তারেক খোন্দকার, সাধারণ সম্পাদক আরেফিন বিল্লাহ, বর্তমান কমিটির কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ আশিকুর রহমান, প্রথম কমিটির সভাপতি চৌধুরী কে এন এম রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান আলী চৌধুরী ও ব্যারিস্টার ফয়সাল দস্তগীর।
বিডি প্রতিদিন/এমআই