শেষ সময়ে রংপুরে গরুর হাটে কেনা-বেচা জমে উঠেছে। বুধবার নগরীর সবচেয়ে বড় গরুর হাট লালবাগে গিয়ে দেখা গেছে কোরবানির পশুর জমজমা কেনাবেচা। ছোট সাইজের গরু ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। মাঝারি সাইজের গরু দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। বড় গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। তবে ছোট সাইজের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির ঈদকে ঘিরে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার অর্থনীতিতে যোগ হবে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। ফলে এই অঞ্চলে অর্থনীতির চালিকা শক্তি নতুন গতি পাবে।
নগরীর কামালকাছনা এলকার রিংকু খান ১ লাখ ২০ টাক দিয়ে একটি গরু কিনেছেন। তার মতে এবার দাম কিছুটা স্বাভাবিক। কাউনিয়া উপজেলার আফজাল হোসেন ৩টি গরু নিয়ে এসেছেন। দুপুর একটার দিকে তিনি একটি গরু বিক্রি করেছেন ৭৫ হাজার টাকা। অন্য দুটি গরু বড় সাইজের। ক্রেতার দরদাম করে চলে যাচ্ছেন। তার আশা এই হাটে তার সব গরুই বিক্রি হবে। তিনি দাবি করেন, গত বছরের চেয়ে এবার তুলনামূলকভাবে দাম কিছুটা কম।
নগরীর রবাটসনগঞ্জ এলাকার খামারি শফি মিয়া বলেন, গো-খাদ্যসহ সব খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এবার দাম কিছুটা বেশি পড়েছে। তাই লাভ কম হবে।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ঈদুল আজহায় রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ১৪ লাখ ১২ হাজারের বেশি পশু কোরবানি দেয়া হয়েছিল। এবার কিছুটা বেড়ে তা ১৫ লাখে দাঁড়াতে পারে। সূত্র মতে মোট পশুর তিনভাগের এক ভাগ হচ্ছে গরু এবং দুই ভাগ হচ্ছে খাসি-ছাগল। সেই হিসেবে এবছর রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ৫ লাখ গরু এবং ১০ লাখ খাসি- ছাগল কোরবানি দেয়া হতে পারে।
রংপুর নগরীর লালবাগ, বুড়িরহাটসহ বেশ কয়েটি গরুর হাট ঘুরে দেখা গেছে ছোট সাইজের গরু ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা, মাঝারি সাইজের গরু এক লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং বড় সাইজের গরু আড়াই থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় সাইজের গরুর চাহিদা খুবই কম। ছোট এবং মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি গরুর গড় মূল্য দেড় লাখ টাকা করে ধরা হলে পাঁচ লাখ গরুর বাজার মূল্য দাঁড়ায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা।
অপরদিকে প্রতিটি খাসি এবং ছাগল বিক্রি হচ্ছে ১২ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকায়। প্রতিটি ছাগল গড়ে ১৫ হাজার টাকা করে ধরা হলে সেই হিসেবে ১০ লাখ খাসি-ছাগলের দাম হচ্ছে সোয়া তিন হাজার কোটি টাকা। তথ্য মতে প্রতিটি প্রাণীর গড়ে মসল্লা লাগে ৫০০ টাকার। সেই হিসেবে মসল্লা কেনা-বেচাতে যোগ হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা। অপরিদিকে একটি গরুর চামড়া সংরক্ষণ করতে লবণ লাগে ৮ কেজি এবং ছাগলের চামড়া সংরক্ষণ করতে লবণ লাগে তিন কেজি। গড়ে ৬ কেজি করে ধরা হলে চামড়া সংরক্ষণে লবণের প্রয়োজন পড়ছে ১০ লাখ কেজির ওপর। প্রতিকেজি লবণ ৩৫ টাকা করে ধরা হলে লবনে যোগ হচ্ছে ৩ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এছাড়া প্রতিপিছ গরুর চামড়া গড়ে এক হাজার টাকা করে বিক্রি হলে ৫ লাখ গরুর চামড়া বিক্রি হবে ৫০ কোটি টাকার। ছাগলের চামড়া গড়ে দেড় থেকে দুইশ টাকা বিক্রি হলে সেখান থেকে আসবে ১৫ কোটি টাকার বেশি। গবাদি পশু, মসল্লা, চামড়া ও লবণে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হবে।
রংপুর বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডাক্তার মোহাম্মদ আব্দুল হাই সরকার জানান, আমাদের পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী এ বছর কোরবানীর ঈদে রংপুরে বিভাগের অর্থনীতিতে যোগ হবে ১২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গবাদি পশুতে যোগ হবে ১০ হাজার কোটি টাকা। তিনি আরও বলেন সরকারের প্রণোদনাসহ বিভিন্ন ভাবে খামারি ও গৃহস্থদের উদ্বুদ্ধ করায় গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৫ লাখের বেশি গবাদি পশুর সংখ্যা বেড়েছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল