শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাটগুলো। ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। সবাই পছন্দ মতো কোরবানির পশু কেনার চেষ্টা করছেন। রাখার জায়গার সংকটসহ নানা কারণেই শেষ দিকেই রাজধানীতে কোরবানি পশু বেচাকেনা বেশি হয়।
তাছাড়াও গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণেও কোরবানির পশু কেনাবেচায় কিছুটা স্থবিরতা দেখা যায়। তবে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই বদলাতে শুরু করেছে পরিস্থিতি। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ঢাকার গরুর হাটগুলোতে বাড়ছে ক্রেতা সমাগম।
এবারের হাটে গরু কিনতে আসা মানুষদের মাঝে আগের বছরগুলোর তুলনায় স্বস্তি একটু বেশি। অনেকে ক্রেতাই বলছেন, এবারের দাম কিছুটা সাধ্যের নাগালে। খুব একটা কম না হলেও পশুর দামে আধিক্য নেই। তাই তারা দরদাম করে মোটামুটি স্বস্তির সাথেই কেনাকাটা করতে পারছেন।
এবার রাজধানীর ২১টি স্থানে পশুর হাট বসেছে। ঢাকা দক্ষিণের শনির আখড়া, ধোলাইখাল থেকে শুরু করে উত্তরের গাবতলী কিংবা দিয়াবাড়ি; সব হাটেই চলছে শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাতে কেনাবেচার ক্ষেত্রে আছে মাত্র আর একটি দিন। তাই সবার ব্যস্ততাও বাড়ছে।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী পশুরহাট শনির আখড়া (দনিয়া কলেজের পূর্ব পাশে ও ছনটেক মহিলা মাদ্রাসার পশ্চিমের খালি জায়গায় হাট)। এ হাটে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ক্রেতার ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। এরই সঙ্গে বেড়েছে পশু বিক্রি। বিক্রেতারাদের প্রত্যাশা আজ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার জমজমাট বেচাকেনা হবে।
শনির আখড়ায় গরু কিনতে আসা আশিক নামের এক ক্রেতা জানালেন, বাড়িতে গরু রাখা ও যত্নআত্তি করার কিছুটা ঝামেলার হওয়ায় তিনি শেষ মুহূর্তে কোরবানির পশু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাছাড়া এতোদিন হাট জমে না ওঠায় দরদাম নিয়েও তিনি কিছুটা সংশয়ে ছিলেন।
হাট সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত তিন দিন অনেকটা অলস সময় কাটাতে হয়েছে। বিক্রি খুব একটা ছিল না। তবে বৃহস্পতিবার ভোরের পর থেকে বিক্রি হঠাৎ করেই বেড়েছে। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
ধোলাইখাল বাজারে গরু কিনতে আসাদের একজন সালাউদ্দিন আহমেদ। তিনি নিজের সাধ্যের মধ্যে পছন্দের গরুটি কিনতে পারায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। জানালেন, পছন্দের গরুটি কিনতে তাকে খুব একটা দরদামও করতে হয়নি। ১ লাখ ৪০ হাজারেই তিনি গরুটি কিনতে পেরেছেন।
সালাউদ্দিনের মতো আরও অনেকেই ছোটো ও মাঝারি আকারের গরু কিনছেন। বিক্রেতা ও পাইকাররা জানিয়েছেন, এবারের হাটেও মাঝারি ও ছোটো আকারের গরুর চাহিদা তুলনামূলক বেশি। বড় গরু নিয়ে তাই অনেককেই কিছুটা বিপাকে পড়তে হয়েছে।
গাবতলী পশুর হাটেও ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। আজ হাটে গরু-ছাগল বেশ বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন হাট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও হাটে কোরবানির পশু আনা বিক্রেতারা। ক্রেতারাও দাম নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।
ক্রেতার পদচারণায় সরগরম গাবতলী গরুর হাট। গরু দেখতে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন ওয়াসিফ ইসলাম। হাটতে হাটতেই তিনি বললেন, ‘অফিস ছুটি হওয়ায় আজই হাটে ছুটে এসেছি। আমার টার্গেট দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যে একটি গরু কেনা।’
গাবতলীতেও ছোট ও মাঝারি আকারের গরু বেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে। এসব গরু ৭০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে কিনেছেন ক্রেতারা।
ঢাকা উত্তরের দিয়াবাড়ি হাটও জমজমাট। সেখানে উত্তরবঙ্গের রংপুর থেকে গরু বেচতে আসা এক ব্যাপারে জানালেন, গরুর দাম ক্রেতাদের হাতের নাগালে থাকলেও বিক্রেতারা পুরোপুরি কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না। আর শেষ মুহূর্তে সব গরুর বিক্রি হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
গরুর পাশাপাশি রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে ছাগলও বিক্রি হচ্ছে বেশ। এর পাশাপাশি কোথাও কোথাও বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে উট-দুম্বাও দেখা গেছে। এছাড়া মহিষ-ভেড়ার বেচাকেনাও চোখে পড়ারর মতো। অনেকেই কোরবানির জন্য গরুর পাশাপাশি মহিষও বেছে নিচ্ছেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল