একদিন আগেই চিন্তায় ছিলেন বিক্রেতারা। ভাঁজ ছিল কপালে। কোরবানির পশু রাজধানীর হাটগুলোতে বিক্রি করতে পারবেন কিনা, সে নিয়ে তারা ছিলেন সন্দিহান। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই বদলাতে থাকে পরিস্থিতি। আর আজ শুক্রবার সকালে এসে বিক্রেতার মুখে হাসি ফুটলেও বিপাকে পড়েন ক্রেতারা। বেশি দাম দিয়েও অনেককে কোরবানির পশু কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারো আবার সামর্থ্য আর দামের হিসাব মিলাতেই হিমশিম দশা।
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে এবার শুরুতে অনেকটা স্থবির ছিলো কোরবানির পশুর হাটগুলো। শুরুতে খুব একটা বেচাকেনা হয়নি। অনেকেই অপেক্ষা করেছিলেন শেষ মুহূর্তের। আর সেই শেষ মুহূর্তেই উল্টে যায় চিত্র। অনেকেই বলছিলেন যে এবার অনেক বিক্রেতাকে বিভিন্ন কারণে বহু অবিক্রিত পশু নিয়ে ঘরে ফিরতে হবে। সেখানে শুক্রবার দেখা গেলো চাহিদার তুঙ্গে থাকা ছোট ও মাঝারি গরুর সংকট দেখা দিয়েছে রাজধানীর হাটগুলোতে।
এদিকে, ইজারাদার ও হাট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবারের হাটেই গরু এসেছে কম। চাহিদা ১০০ ভাগ থাকলেও রাজধানীর হাটগুলোতে গরু ঢুকেছে ৭০ ভাগ। সে হিসেবে শুরু থেকেই গরুর ঘাটতি ছিলো হাটগুলোতে। আর এই গরু কম আসাই শেষ মুহূর্তে সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে।
তবে ভিন্ন চিত্রও আছে। ছোটো এবং মাঝারি গরুর চাহিদা তুঙ্গে থাকলেও বড় গরুর ক্রেতা একেবারেই কম বলে জানাচ্ছেন হাট সংশ্লিষ্টরা। বিক্রেতারা বলছেন, বড় গরুগুলো কম দামে ছাড়লে লোকসান গুনতে হবে। তাই শেষ সময় পর্যন্ত তারা দেখতে চান।
এবার রাজধানীর ২১টি স্থানে পশুর হাট বসেছে। ঢাকা দক্ষিণের শনির আখড়া, ধোলাইখাল থেকে শুরু করে উত্তরের গাবতলী কিংবা দিয়াবাড়ি; সব হাটেই চলছে শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী পশুরহাট শনির আখড়া (দনিয়া কলেজের পূর্ব পাশে ও ছনটেক মহিলা মাদ্রাসার পশ্চিমের খালি জায়গায় হাট)। এ হাটে শুক্রবার সকাল থেকেই ছোটো ও মাঝারি গরু রাখার জায়গাগুলো ফাঁকা হতে থাকে। তাই পছন্দসই পশু পেলেই দামের কথা না ভেবেই কিনে ফেলছেন অনেকে। ক্রেতারা বলছেন, এখন আর দেখাদেখির সময় নেই। কোরবানির জন্য পশু কিনতে হবে এটাই বড় কথা।
চাহিদার তুলনায় জোগান কিছুটা কম থাকার সুফল পাচ্ছেন বিক্রেতারা। হতাশার বদলে এখন তাদের মুখে হাসি ফুটছে। নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদি ও মুন্সিগঞ্জের মতো ঢাকার নিকটবর্তী জেলা থেকে কোরবানির পশু এনে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
দক্ষিণের ধোলাইখাল থেকে শুরু করে উত্তরের গাবতলী কিংবা দিয়াবাড়ি; সব হাটেই দেখা গেছে একই চিত্র। বিক্রেতারা আরও বেশি লাভের আশায় এখনো দরদাম, দড়ি টানাটানি করছেন। তবে বাড়তি চাহিদার চাপ সামাল দিতে আজও গাবতলী হাটে পশু আসছে দেশের নানা প্রান্ত থেকে।
তেজগাঁও, কমলাপুরসহ বেশ কয়েকটি হাটের চিত্রও সেই একই। বড় আকারের গরু নিয়ে খামারিরা অপেক্ষায় বসে থাকলেও তারা দাম পাচ্ছেন না। বেশির ভাগ ক্রেতা ছোট আকারের গরু খুঁজছেন, যেগুলোর দাম ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে। কিন্তু এমন গরুর সংখ্যা হাটে খুবই সীমিত। অনেকে আসছেন, দেখছেন, দাম শুনে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, বড় গরু পালন করতে অনেক খরচ পড়ে, সেই খরচ তুলতে গেলে দাম তো একটু বেশি চাইতেই হয়।
গরু ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর ছোট গরুর সংখ্যা তুলনামূলক কম। কারণ অনেক খামারি এবার আর্থিক ঝুঁকি এড়াতে বড় আকারের গরু তুলেছেন, যাতে বেশি দাম পাওয়া যায়। তাছাড়া ছোট গরু তুললেও ঈদের আগে অনেকেই স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাই হাটে এসে দেখা যাচ্ছে, যেটা সবচেয়ে বেশি চাহিদা, সেটাই নেই।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল