পাবনার চাটমোহর উপজেলার কুমারগাড়া গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক গয়ানাথ সরকার জীবনের ৪৮টি বছর কাটিয়েছেন শিক্ষকতা পেশায়। অনেক শিক্ষার্থী তার দেওয়া শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত হয়েছেন। অনেকে হয়েছেন বড় অফিসার। কিন্তু আজ কেউ আর খোঁজ রাখেন না তাদের এই প্রিয় শিক্ষকের। যে মানুষটি তার মেধা আর কলমের ছোঁয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের ভীত গড়ে দিতেন সেই মানুষটি এখন মানুষের বসবাসের ভীত গড়ার কাজ করে কোন মতে জীবিকা নির্বাহ করছেন। লজ্জা পেলেও জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে চাটমোহরের এই প্রবীণ শিক্ষক এখন হয়েছেন রাজমিস্ত্রির জোগালি। তিনি এখন ভাগ্যের কাছে অসহায়।
শিক্ষক গয়ানাথ সরকারের এমন ভাগ্যচিত্র নিয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ হলে নজরে আসে নন্দিত কথাসাহিত্যিক বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ইমদাদুল হক মিলনের। এরপর তিনি বসুন্ধরা শুভসংঘের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পর্ষদ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের ডেকে নিয়ে এই শিক্ষককে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়ে তাগাদা প্রদান করেন। এরপর কালের কণ্ঠের চাটমোহর উপজেলা প্রতিনিধির মাধ্যমে সেই শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করা হয়।
শনিবার দুপুরে চাটমোহর উপজেলা শুভসংঘের সদস্যরা শিক্ষক গয়ানাথ সরকারের বাড়িতে যায়। সেখানে শিক্ষক পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের সমস্ত বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে শুভসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরিবারটিকে প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদানের কথা জানানো হয়। একই সাথে তার সন্তানদের লেখাপড়ায় যেন বিঘ্ন না ঘটে সে বিষয়ে বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস প্রদান করা হয়।
এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিক্ষক গয়ানাথ সরকার বলেন, ছাত্র অবস্থাতেই আমি প্রাইভেট পড়ানো শুরু করি। দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষকতা করেছি। কিন্তু হঠাৎ শিক্ষকতা পেশা থেকে ছিটকে যাব ভাবতে পারিনি। চেয়েছিলাম জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে। কিন্তু আজ আমি নিরুপায় হয়ে রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করছি। এতে আমার খুব কষ্ট হলেও এটাই আমার নিয়তি। তবে আজ বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষ থেকে যে সুসংবাদ পেলাম, আর্থিক সহায়তার যে আশ্বাস পেলাম আমি কোন দিন ভুলবো না। আমি সারা জীবন আশীর্বাদ করবো বসুন্ধরাকে। তারা যেন এভাবেই মানুষের পাশে থেকে সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রাখে।
নন্দিত কথাসাহিত্যিক বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ইমদাদুল হক মিলন বলেন, বসুন্ধরা শুভসংঘ সব সময়ই মানবতার কাজ করে। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। একজন মানুষ গড়ার কারিগর এমন অসহায় অবস্থায় আছে দেখে আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে তার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বসুন্ধরা গ্রুপ দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠের চাটমোহর উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুল লতিফ রঞ্জু, শুভসংঘ চাটমোহর উপজেলা শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান সুজন, উপজেলা শুভসংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ মণ্ডল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাজিদ হোসাইন, কোষাধ্যক্ষ জুয়েল রানা, সদস্য অমিত সরকার শাওন, ইনাজুল ইসলাম প্রমুখ।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল