নওগাঁর বদলগাছীর জিয়ল গ্রামের বাসিন্দা আবদুল্লাহ ইবনে আজিজ মারজান। পেশায় একজন মৎস্য চাষি। স্বল্পব্যয়ে মাছ চাষিদের জন্য পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্য তৈরি করে জেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। যেখানে বাজারে মাছের খাদ্য ৮০ টাকা কেজি সেখানে নিজে তৈরি করছেন ৫০ টাকা কেজি দরে। মারজানের সাফল্য দেখে অন্য চাষিরাও তাঁর তৈরিকৃত খাদ্য ব্যবহারে বেশ লাভবান হচ্ছেন। পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন পিকেএসএফের সহযোগিতায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমী। জেলায় প্রথম এ কৃষি উদ্যোক্তা স্বল্পখরচে মাছের খাদ্য তৈরি করায় উপজেলার ১০ জন মৎস্য চাষি প্রতিদিন সেই খাদ্য ব্যবহার করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। তাদের কথা হলো খরচ কম লাভ বেশি। কৃষি উদ্যোক্তা আবদুল্লাহ ইবনে আজিজ মারজান জানান, মাছের খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় খাদ্য কিনতেই তাঁর লাভের টাকা চলে যায়। তিনি লাভের মুখ দেখতে না পেরে ২০২৪ সালের প্রথম দিকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমীর কৃষি অফিসার শাহারিয়া হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই সুবাদে তিনি সেখান থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নেন। সেই টাকা দিয়ে মৎস্য অফিসারের পরামর্শে একটি ফিশফিড তৈরির মেশিন ক্রয় করেন। এ ছাড়া তারাই কীভাবে খাদ্য তৈরি করা যায় সেই প্রশিক্ষণ দেন। এরপর তিনি বাজার থেকে খাদ্য তৈরির উপকরণগুলো কিনে এনে নিজেই খাদ্য তৈরি করেন। শুরু হয় তাঁর জীবনের সফলতার নতুন যাত্রা। তিনি বলেন, ‘খাদ্যের উপাদান সঠিক ও টাটকা হওয়ায় অল্পদিনেই মাছের গ্রোথ ভালো হয়। বাজারে বিক্রীত খাদ্যের দামের তুলনায় দাম প্রতি কেজিতে ২০-২৫ টাকা কম। যার ফলশ্রুতিতে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ৫ বিঘা আয়তনের পুকুর থেকে তিনি ২ লাখ টাকা আয় করছেন।’ তাঁর এই সাফল্য দেখে আশপাশের ১০ জন মৎস্য চাষি প্রতিদিন তার মেশিনে তৈরি পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্য কিনে নিয়ে যান। বর্তমানে মারজান তিনটি পুকুরে মাছ চাষ করছেন। যা আগামীতে আরও বড় পরিসরে করবেন। কয়েকজন মাছ চাষি বলেন, বাজারে যেখানে প্রতি কেজির দাম ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। সেখানে মারজান দিচ্ছেন মাত্র ৫০ টাকা কেজি। আর এখানকার খাদ্য টাটকা। প্রতিদিনের খাদ্য প্রতিদিন তৈরি করে বিক্রি করেন। আর বাজার থেকে যে খাদ্য আমরা নিয়ে আসি সেগুলো ১-২ মাস আগে তৈরি করায় গুণগতমান কমে যায়। মাছের গ্রোথ আশানুরূপ হয় না। লাভ কম হয়। আর এখানকার খাদ্য টাটকা হওয়ায় প্রতিদিন নিয়ে গিয়ে পুকুরে দিলে মাছের গ্রোথ দ্রুত বেড়ে যায়। অল্প সময়ের মধ্যে বাজারে বিক্রি করলে বেশি লাভ পাওয়া যায়। মৌসুমীর মৎস্য কর্মকর্তা শাহারিয়া হোসেন বলেন, ‘মারজানকে আমরা ফিশফিড তৈরির মেশিন দিয়েছি। মেশিনে নিজে তৈরি করা ফিশফিড যতটুকু ভিটামিন ও প্রোটিন দরকার তা পরিমাণ দেওয়া হয়। আর প্রতিদিন তৈরি করে তা মাছকে খাওয়ানো হয়। এতে করে খাদ্যের গুণগতমান ভালো থাকে। খরচ কম হয় আর চাষিরা লাভবান হন।’ তিনি আশা করেন, মারজানের সাফল্য দেখে নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তারা মাছ চাষ করে বাড়তি আয় করতে পারবেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই