রংপুর অঞ্চলে নদ-নদীগুলো বন্যার সময় বানের জলে পাড়ের আশপাশের মানুষগুলোকে শুধু কাঁদায় না, জেগে ওঠা চরে ফসল ফলিয়ে কৃষদেরও বাঁচায়। চরে ফসল ফলিয়ে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন। শুকনো মৌসুমে এসব নদীতে জেগে ওঠে বিস্তীর্ণ চর। চরের ফসলে কৃষকদের স্বস্তি এসেছে, এসেছে আর্থিক সচ্ছলতা। জেগে ওঠা চরে প্রতি মৌসুমে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এসব ফসল কৃষকদের বাড়তি আয়ের পাশাপাশি এই অঞ্চলের অর্থনীতির গতি সচল রেখেছে। শুকনো মৌসুমে এসব ফসল ফলায় কৃষকরা বন্যার সময় প্লাবিত হওয়ার দুঃখ কিছুটা ভুলে যাচ্ছেন। নদী পানি শূন্য হয়ে পড়ায় সেগুলো এখন আবাদি জমিতে পরিণত হয়ে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন করছে। এটাকে অনেকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন।
রংপুর কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, ঘাঘট, চারালকাটাসহ অন্যান্য নদ-নদীগুলোতে ৭৩৫টি চর রয়েছে। এসব চরের জমির পরিমাণ এক লাখ ৪ হাজার ৫৫৪ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদযোগ্য জমি রয়েছে ৮১ হাজার ৩০১ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার ফসল উৎপাদন হলে মোট ১২০০ কোটি টাকার ফসল চরের কৃষকরা ঘরে তুলবেন।
জেগে ওঠা এসব চরের জমিতে আলু, ভুট্টা, গম, বাদাম, তিল, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, বেগুন, করলা, সরিষা, সূর্যমুখী, গাজরসহ বিভিন্ন শাকসবজি আবাদ হচ্ছে। ফলে এখন চরের যেদিকেই তাকানো যাবে, সেদিকেই দেখা যাবে সবুজের সমারোহ। চর এখন সবুজের বাগানে ভরে উঠেছে।
কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এসব চরে আলু প্রতি হেক্টরে ২৪/২৫ মেট্রিন টন, ভুট্টা ১২/১৩ মেট্রিক টন, গম তিন থেকে সাড়ে ৩ টন, শাক-সবজি প্রতি হেক্টরে ১৫ থেকে ২০ টন উৎপাদন হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে এসব ফসল ফলায় কৃষকরা বন্যার সময় প্লাবিত হওয়ার দুঃখ কিছুটা ভুলে যাচ্ছেন। নদী পানি শূন্য হয়ে পড়ায় সেগুলো এখন আবাদি জমিতে পরিণত হয়ে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন করছে।
গঙ্গচড়া উপজেলার লক্ষীটারি ইউনিয়নের হাদি মিয়া, আবুল কালাম, মতলুব রহমান, মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, বন্যার সময় তিস্তা দুই কূল ছাপিয়ে প্লাবিত করলেও শুকনো মৌসুমে ফসলের আবাদ করে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য আসে তাদের। চরে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে বাড়তি টাকায় অনেকে অনেক প্রয়োজন মিটাচ্ছেন। চরের অধিকাংশ মানুষ এখন বিভিন্ন প্রজাতির ফসল উৎপাদন করে দারিদ্র্য দূর করছেন।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, চরের জমিতে বেশি বেশি করে ফসল ফলাতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ চরের কৃষকদের সব সময় পরামর্শ দিচ্ছে। রংপুর অঞ্চলের চরে ৮০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে কৃষকরা গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা রেখেছেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই