রাজধানীতে রাস্তা দখল করে বসছে ভ্রাম্যমাণ বাজার। এতে তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট। গতকাল রাজধানীর গুলিস্তান, মিরপুর, রূপনগর আবাসিক এলাকা, বাড্ডা, নতুনবাজার মাদানী সড়ক ঘুরে দেখা যায় সড়কের দুই পাশের ফুটপাত পেরিয়ে মূল সড়কে দেদার চলছে হাটবাজার।
নগর বিশ্লেষক স্থপতি ইকবাল হাবীব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সড়ক হচ্ছে নাগরিকের অধিকারের জায়গা। পথচারীদের সঙ্গে হকারের একটি সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে কাঠামোগত নিয়মের মধ্য দিয়ে হকার নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিপালন করা হয়। হকার কোথায় বসবে এরও একটা পরিকল্পনা থাকে, যেন জনগণের চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে। তাদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান থাকে যেখানে খাবার পানি, বর্জ্য ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধা থাকে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে উদাসীন থাকলে চলবে না। বিশেষ জোর দিয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মিরপুর-১ গোলচত্বর থেকে শাহ আলী মাজারের আগ পর্যন্ত সড়কে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে হাটবাজার। দুপুরের দিকে একটু কমলেও সকাল এবং রাতে সড়কের দুই পাশজুড়েই থাকে এসব দোকানপাট। অবস্থা এমন, রাস্তার মধ্য দিয়ে হেঁটে চলাচল করাই মুশকিল হয়ে পড়ে।
এখানকার বাসিন্দা লাইলী আক্তার বলেন, প্রতিদিনই দেখা যায় এখানে অস্থায়ী এসব দোকান বসছে যেন দেখার কেউ নেই। জুতা, জামাকাপড়, সবজি, ফলমূল থেকে শুরু করে সড়কজুড়ে পাওয়া যায় না এমন কিছু নেই। ফলেরাস্তায় প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে।
রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকার ২৫ থেকে ৩০ নম্বরের লিংক রোড পর্যন্ত হাটবাজার ও দোকানপাটের ছড়াছড়ি। পুরোটাই রাস্তার দুই পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে। এরই মধ্য দিয়ে যেনতেনভাবে চলাচল করছে অটোরিকশা। নাগরিকদের চলাচলে সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা লিয়াকত হোসেন খোকন জানান, এই রাস্তায় দীর্ঘসময় যানজটে বসে থাকতে হয়। কখনো কখনো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয় বাসিন্দারা, আহত হয়ে হাসপাতালে পর্যন্ত নিতে হচ্ছে তাদের।
মৌচাক থেকে মালিবাগ বাজার সড়কে বছরের পর বছর ধরে সড়ক দখল করে চলছে অস্থায়ী দোকানপাট। ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রী ও পথচারীরা। রাজধানীর বাড্ডা এলাকার সড়কের দুই পাশজুড়ে মূল রাস্তার ওপর বসছে শত শত ভাসমান দোকানপাট। ফলে সড়কটি সরু হয়ে পড়েছে। সড়কের যত্রতত্র যেখানে সেখানে বসেছে এসব দোকানপাট। মেরুল বাড্ডার পর থেকে সুবাস্তু পর্যন্ত এলাকায় রাস্তা যেন ভোগান্তির অপর নাম। এখানে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিদিনই। গতকাল সন্ধ্যায় ১ কিলোমিটার যানজটে আটকে থাকা অ্যাম্বুলেন্সের যাত্রী নিলুফার ইয়াসমিন জানান, রোগী নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে যাচ্ছি। তিনি তখনো জানেন না কেন যানজট। এই সড়কে সারা বছরই এমন দুর্ভোগের শিকার হন যাত্রীরা।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার তালেবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসলে এ অবস্থা নিরসনে চেষ্টা করে যাচ্ছি। একদিক থেকে তুলে দিলে আরেক দিকে বসে। আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। তারপরও দেখা যায় সরানো যাচ্ছে না। বিষয়টা আমাদের জন্যও চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
নতুন বাজার এলাকার মাদানী সড়ক রাস্তাটিরও বেহালদশা। সড়কের দুই পাশে বসা অবৈধ দোকানপাটের কারণে। এখানকার বাসিন্দা বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ছোটন রায় বলেন, ‘আমি প্রতিদিনই এই সড়ক ব্যবহার করছি। কর্তৃপক্ষের এই চরম জনদুর্ভোগ লাঘবে গুরুত্ব সহকারে কাজ করা উচিত। সড়কের দুই পাশে সারাক্ষণ যানজট লেগেই থাকে। রাত কিংবা সাত সকালেও যানজট থেকে রেহাই নেই। এমনকি ছুটির দিনেও এ রাস্তায় চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।’