রাজশাহীর নওহাটা পৌর এলাকার ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বারনই নদীতে। একই নদীতে বাগমারা ও তাহেরপুর পৌরসভা বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে। দুর্গাপুর পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হয় হোজা নদীতে। গোদাগাড়ী পৌরসভা ফেলে পদ্মা নদীর বিভিন্ন স্থানে। কাটাখালী পৌরসভার কঠিন বর্জ্য ফেলা হয় সিটিহাটের ভাগাড়ে। তবে বেশির ভাগ ময়লা ফেলা হয় কাটাখালী বাজার এলাকার ড্রেনে। ফলে বৃষ্টির সময় ড্রেন ভরে গিয়ে পানি জমে থাকে। বাঘা পৌরসভায় নির্ধারিত জায়গা থাকলেও বর্জ্য ফেলা হয় শাহি মসজিদের পুকুরে।
রাজশাহীতে পৌরসভা ১৪টি। ১৩টিতেই নেই নির্ধারিত ময়লা-আবর্জনা ফেলার জায়গা বা ডাম্পিং স্টেশন। ফলে এসব পৌর এলাকায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে, ড্রেন, পুকুর কিংবা নদীতে। এতে পরিবেশদূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
যদিও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য চারটি পৌরসভায় প্রায় ৬ কোটি টাকার একাধিক প্রকল্প থাকলেও নানান সমস্যায় দীর্ঘদিনেও সেগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি। বর্জ্য সংগ্রহ ও নির্দিষ্ট জায়গায় নেওয়ার জন্য কোটি টাকায় কেনা যানবাহন ও সরঞ্জাম ব্যবহারের সুযোগ না পাওয়ায় এখন সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পৌরসভাগুলো প্রতি বছর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয় করলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
বাঘা এলাকার সরকার মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘পুকুরে বর্জ্য ফেলার কারণে প্রচ- দুর্গন্ধ হয়। সেখানে গোসল করলে চর্মরোগ বা ডায়রিয়া হতে পারে। মাঝে মাঝে খোলা জায়গায়ও বর্জ্য ফেলা হয়, আবার ফেলা হয় ড্রেনে, যা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। জমে থাকা পানিতে মশা জন্মায়, সে মশা-মাছি থেকে নানান রোগ ছড়াতে পারে।’ স্কুল শিক্ষিকা সাকিলা খাতুন বলেন, ‘বারনই নদী নওহাটা থেকে বাগমারা ও তাহেরপুর হয়ে গেছে। নওহাটা পৌরসভার বর্জ্য নদীতে ফেলা হলে তা ভেসে গিয়ে অন্য এলাকাগুলোতেও পৌঁছায়। এসব বর্জ্য পচে গিয়ে দুর্গন্ধ ও জীবাণু ছড়ায়। ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।’ বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘চর্মরোগ ও ডায়রিয়া হতে পারে। এ ছাড়া বর্জ্য থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণে হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যানসার ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।’ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কবির হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের দূষণ তৈরি হচ্ছে, যা থেকে রোগ ছড়াচ্ছে। পরিবেশগত সমস্যাগুলো আমাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’
আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কাটাখালী, তাহেরপুর, বাঘা ও গোদাগাড়ী পৌরসভায় প্রায় ৬ কোটি টাকার একাধিক প্রকল্প চলছে। কিন্তু জমি না পাওয়া, প্রশাসনিক জটিলতাসহ নানান প্রতিবন্ধকতায় প্রকল্পগুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ডাস্টবিন, ভ্যান, ভেকুসহ বিভিন্ন পরিবহন ব্যবহারের সুযোগ না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ার পথে। কাটাখালী পৌরসভার প্রশাসক জাহিদ হাসান বলেন, ‘মানবসৃষ্ট বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য এখনো নির্দিষ্ট কোনো জায়গা পাইনি। উপযুক্ত জায়গা খোঁজা হচ্ছে।’
রাজশাহী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘পচনশীল বর্জ্য থেকে বিষাক্ত গ্যাস ও ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়, যা নানান রোগের কারণ হতে পারে। ভবিষ্যতে এটি আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’