ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। ইতোমধ্যে ২৯৮ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে তারা। দুটি আসনের মনোনয়ন আটকে আছে কিছু জটিলতায়। এ ছাড়া যেসব আসনে দলের শক্ত প্রার্থী নেই, সেসব আসনে এবার দলের বাইরের ক্লিন ইমেজের নীতিনৈতিকতাসম্পন্ন ব্যক্তি, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির লোক মনোনয়ন দেবে দলটি। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু আসনে অমুসলিম ব্যক্তিকেও প্রার্থী করা হতে পারে। দলের অভ্যন্তরীণ এক জরিপে দেখা গেছে শতাধিক আসনে জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে। এসব আসনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী দলটি। তবে একসময়ের বিএনপির মিত্র জামায়াতে ইসলামী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের আন্দোলন করলেও এখন তাদের সম্পর্ক দুই মেরুতে। বর্তমান বাস্তবতায় বিএনপির সঙ্গে কোনো প্রকার নির্বাচনি সমঝোতা করবে না জামায়াত। দলের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। ডিসেম্বরে তারা নির্বাচনের চূড়ান্ত তারিখ বা তফসিল ঘোষণা করবে। একটি সূত্রমতে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ হতে পারে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। সেই ভোটযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য জামায়াতের তৎপরতাও ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী ২৯৮ আসনে খসড়া প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। প্রার্থীরা যার যার নির্বাচনি এলাকায় ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে অনেক আসনের প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে বলে জানা গেছে। কিছু আসনে বিতর্কিত প্রার্থীদের বাদ দিয়ে নতুন প্রার্থী দেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে দলের রোকন নন, কিন্তু ক্লিন ইমেজ আছে, এমন মুসলিম অথবা অমুসলিম ব্যক্তিকেও দলটি এবার নমিনেশন দেবে। দলীয় সূত্র মতে, আসন্ন নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য অতীতের ধরাবাঁধা নিয়মে এবার পরিবর্তন আনবে জামায়াত। একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এলাকায় গ্রহণযোগ্য, জাতীয়ভাবে পরিচিত কোনো মুখ প্রার্থী হতে চাইলে বিবেচনা করা হবে। আগ্রহ ও যোগ্যতা থাকলে অমুসলিম ব্যক্তিদেরও বিবেচনা করা হবে। জানা যায়, চলতি বছরের শুরু থেকেই দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আসনে খসড়া প্রার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে পোলিং এজেন্টদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কোন আসনে কারা পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন- সেসব খোঁজখবরও দলের পক্ষ থেকে রাখা হচ্ছে। অতীতের চেয়ে এবার দলটি সব বিষয়ে অনেক বেশি কৌশলী বলে কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। দলীয় সূত্রে জানা যায়, জামায়াত গত বছরের ডিসেম্বরে সারা দেশে প্রতিটি আসনে প্রথম পর্যায়ের জরিপ পরিচালনা করে। ওই জরিপের প্রেক্ষিতে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, জামায়াত রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনের সব, খুলনার ৩৫ আসনের সব, রাজশাহী বিভাগের ৩৯টি আসনের ১০-১২টি, বরিশালের ২১ আসনের তিনটি, চট্টগ্রামের ৫৮ আসনের ১২টি, সিলেটের ১৯ আসনের তিনটি, ময়মনসিংহের ২৪টি আসনের দুটি এবং ঢাকার ৭১ আসনের কয়েকটিসহ শতাধিক আসনে বিএনপির বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবে। এসব আসনে তাদের শক্ত সাংগঠনিক অবস্থানও রয়েছে। নির্বাচনে এসব আসনে জয়ের সম্ভাবনাও রয়েছে বলে নির্বাচন পরিচালকরা মনে করেন। তবে জোট বা সমঝোতা হলে এসব আসনের কয়েকটি ছেড়ে দেওয়া হবে নির্বাচনি মিত্রদের। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনমুখী দল। আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে জামায়াত। ইতোমধ্যে আসনভিত্তিক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তারা প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে কিছু আসনের প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। এর মধ্যে ক্লিন ইমেজের লোক অর্থাৎ যারা গ্রহণযোগ্য ও পরিচিত মুখ তাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। তবে এদের মধ্যে অবশ্যই নৈতিকতাসম্পন্ন ব্যক্তি ও নেতৃস্থানীয় পেশাজীবী হতে হবে।
বিএনপির সঙ্গে জোট গঠন বা নির্বাচনি কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় আমরা সবাই একসঙ্গে মাঠে ছিলাম। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আমরা রাষ্ট্র মেরামতে মনোযোগী হই। কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীরা জেলা, উপজেলা, শহর সব জায়গায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানান অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। এতে সাধারণ মানুষ তাদের ওপর বিরক্ত। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের ইমেজ সংকটে রয়েছে। এখন এই অবস্থায় দলটির সঙ্গে জোট বা শরিক হতে আমরা চাই না। আর জরিপ প্রসঙ্গে জামায়াতের এই নেতা বলেন, দলের অবস্থান নিশ্চিত করতে অভ্যন্তরীণ জরিপ সাধারণ বিষয়। এটা আমাদের নিয়মিত কাজের একটা অংশ।