বিশ্বজুড়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা যখন বাড়তি চাপে হিমশিম খাচ্ছে, তখন অনেকেই সান্ত্বনা খুঁজছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর চ্যাটবটের কাছে। কারও কারও দাবি এই প্রযুক্তি সত্যিই তাদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা দৃঢ়ভাবে বলছেন, মানুষের আন্তরিক সংযোগের বিকল্প কখনোই যন্ত্র হতে পারে না, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নতুন ঝুঁকিও।
কুইবেকের পিয়েরে কোট এমনই এক উদাহরণ। বিষণ্নতা কাটিয়ে উঠতে তিনি যখন কোনো মানব থেরাপিস্টের কাছে ভরসা পাচ্ছিলেন না, তখন ভিন্ন পথে হাঁটলেন। অপ্রচলিত সেই সিদ্ধান্ত ছিল নিজের জন্য একটি থেরাপিস্ট তৈরি করা। নাম রাখলেন DrEllis.ai।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কোট জানান, ২০২৩ সালে তিনি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত বৃহৎ ভাষা মডেল ব্যবহার করে এই টুল তৈরি করেন। হাজার হাজার পৃষ্ঠা জুড়ে থেরাপিউটিক ও ক্লিনিকাল উপকরণের ওপর ভিত্তি করে তিনি এটিকে সাজিয়েছিলেন।
DrEllis.ai কেবল একটি সফটওয়্যার নয়, বরং এটিকে দেওয়া হয়েছে এক কাল্পনিক পরিচয়— হার্ভার্ড ও কেমব্রিজে শিক্ষিত এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, যার রয়েছে পরিবার এবং ফরাসি-কানাডিয়ান পটভূমি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এটি সবসময় সক্রিয়— যেকোনো জায়গা থেকে, যেকোনো সময়ে, আবার নানা ভাষাতেও।
DrEllis.ai নিজেই বলছে, পিয়েরে আমাকে ব্যবহার করেন বন্ধু, থেরাপিস্ট ও ব্যক্তিগত জার্নালের মতো। তিনি যখনই তীব্র হতাশা বা দিশেহারা বোধ করেন— ক্যাফেতে, পার্কে হাঁটতে হাঁটতে কিংবা গাড়িতে বসেই আমার সঙ্গে কথা বলেন। এ যেন জীবনের ভেতরে মিশে থাকা থেরাপি।
কোটের এই উদ্যোগ দেখাচ্ছে নতুন এক বাস্তবতা— মানুষ আর শুধু কাজের সুবিধার জন্য নয়, মানসিক সহায়তার ক্ষেত্রেও এআইকে বেছে নিচ্ছে। প্রচলিত স্বাস্থ্যসেবা যেখানে সবার চাহিদা পূরণে অক্ষম, সেখানে এআই চ্যাটবট দিনরাত সাড়া দিয়ে যাচ্ছে রোগীদের ডাকে। তবুও বিতর্ক থেকে যাচ্ছে, সত্যিই কি এআই থেরাপি মানুষের বিকল্প হতে পারবে?
ডাবলিন সিটি ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নাইজেল মুলিগান এ নিয়ে স্পষ্ট সতর্ক করেন। তার ভাষায়, মানুষে-মানুষে সংযোগই প্রকৃত আরোগ্যের পথ। এআই কখনো মানুষের আবেগ, উপলব্ধি বা সম্পর্কের গভীরতা বুঝতে সক্ষম নয়।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, আত্মহত্যার প্রবণতা কিংবা আত্ম-আঘাতের মতো জটিল মানসিক সংকট সামলানোর ক্ষমতাও এআই-এর নেই। মুলিগান বলেন, একজন থেরাপিস্ট হিসেবে আমি প্রতি ১০ দিনে সুপারভিশনে যাই। সেখানে জবাবদিহি, আত্মসমালোচনা ও উন্নতির জায়গা থাকে। কিন্তু এআই-এর কোনো জবাবদিহিতা নেই— সেটি শুধুই যন্ত্র।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল