আজ ২৭ আগস্ট, ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে অবিস্মরণীয় নাম স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের জন্মদিন। ১৯০৮ সালের এই দিনে, অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের ছোট্ট শহর কুটামুন্ডিতে জন্ম নিয়েছিলেন ডোনাল্ড জর্জ ব্র্যাডম্যান। আজ তার ১১৭তম জন্মবার্ষিকী।
ছেলেবেলার খেলাধুলা থেকেই ফুটে উঠেছিল তার ব্যাটিং প্রতিভা। নিজের বাড়ির উঠোনে, একটি গলফ বল, একটি স্টাম্প আর একটি পানির ট্যাঙ্ক দিয়েই শুরু হয়েছিল অনুশীলন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেয়ালে বল ছুঁড়ে সেটিকে স্টাম্প দিয়ে আঘাত করতেন ব্র্যাডম্যান। এই অদ্ভুত কিন্তু কার্যকর কৌশলেই গড়ে ওঠে তার চোখ-হাতের সমন্বয়, যেটি তাকে ভবিষ্যতের ব্যাটিং দানবে রূপ দেয়।
১৯২০-এর দশকে ব্র্যাডম্যান খেলেছিলেন টেনিসও, এমনকি দুই বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে দূরে থেকেছিলেন। পরে আবার ফিরে আসেন ক্রিকেটে। স্থানীয় ক্লাব বোরালের হয়ে ৩২০ রানের ইনিংস সহ একের পর এক বিশাল স্কোর করে নজর কাড়েন নির্বাচকদের।
১৯২৬ সালে নিউ সাউথ ওয়েলস ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন তাকে ডাক দেয় সিডনিতে ট্রায়ালের জন্য। ঠিক সেই সময় বস থেকে এক সপ্তাহ ছুটি পান, কিন্তু শর্ত ছিল টেনিস অথবা ক্রিকেট, বেছে নিতে হবে একটিকে। ব্র্যাডম্যান বেছে নেন ক্রিকেট, আর তাতেই বদলে যায় ইতিহাস।

১৯২৮ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট অভিষেক হয় ডন ব্র্যাডম্যানের। প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হলেও এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৩০ সালে ইংল্যান্ড সফরে খেলেন ঐতিহাসিক ৩৩৪ রানের ইনিংস, যা তখনকার টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ ইনিংসগুলোর একটি।
ব্র্যাডম্যানের দাপটে বিপর্যস্ত ইংল্যান্ড ১৯৩২-৩৩ সালের অ্যাশেজে ‘বডিলাইন’ নামে একটি বিতর্কিত কৌশল প্রয়োগ করে। শরীর লক্ষ্য করে গতিময় বোলিং করে তাকে আটকানোর চেষ্টা হয়। তবুও সিরিজে তার গড় ছিল ৫৬.৫৭।
ব্র্যাডম্যান টেস্ট ক্যারিয়ারে খেলেছেন ৫২টি ম্যাচ, করেছেন ৬৯৯৬ রান, যার গড় ৯৯.৯৪। মাত্র ৪ রান করলেই গড় হতো ১০০, কিন্তু শেষ ইনিংসে শূন্য রানে আউট হন ইংল্যান্ডের এরিক হলিসের বলে। সেই মুহূর্তটি ক্রিকেট ইতিহাসে এক অপূর্ণতাজনিত দুঃখের প্রতীক।
১৯৪৮ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি, তবে যুক্ত ছিলেন প্রশাসক ও পরামর্শকের ভূমিকায়। ১৯৭০ সালে তাকে নাইটহুড প্রদান করা হয় 'স্যার ডন ব্র্যাডম্যান' নামে তাকে সম্মানিত করা হয় ক্রিকেট বিশ্বে।
২০০১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, ৯২ বছর বয়সে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। তবে তার তৈরি করা ৯৯.৯৪ গড় আজও ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে চর্চিত ও সম্মানিত পরিসংখ্যান।
বিডি প্রতিদিন/মুসা