শুধু রাজধানীতে গত বছরের ১ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৯০৮ জনের মৃত্যু হয়। এ সময়ে আহত হয়ে কয়েকজনের মৃত্যু পরে হাসপাতালেও হয়েছে। হাসপাতাল ও পুলিশের খাতায় রেকর্ড আছে ৫৮৬ জনের মৃত্যু। ৩২২ জনের মৃত্যুর তথ্য কোথাও রেকর্ড করা হয়নি বলে জানা যায়। একই সময় আহত হয়েছে ১ হাজার ৮০০ জনের বেশি। বিভিন্ন হাসপাতালের রেকর্ড, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, রোগীদের নিবন্ধন এবং পুলিশের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৫-৩০ বছর বয়সিদের মৃত্যু হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এর হার ৯৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। ৫ আগস্টের দিন রাজধানীতে ৮২ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। ৬ আগস্ট মারা যান ৬৪ জন। এদের ৮৪ শতাংশই মারা যান হাসপাতালে যথাযথ সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে। এদিকে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৬ জুলাই থেকে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ৩০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পুলিশের একটি গবেষণায় দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল তারুণ্যনির্ভর। আহতদের মধ্যে বেশির ভাগ ৪০ বছরের নিচে। পুলিশ সর্বাধিক প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে, এর সংখ্যা ১৬৫ বার। অপ্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের সংখ্যা ৩৩ বার। অপ্রাণঘাতীর মধ্যে রয়েছে- রাবার বুলেট, টিয়ারগ্যাস বা স্টান গ্রেনেড ইত্যাদি। এ ছাড়া অস্ত্র ব্যবহারে সর্বোচ্চ সম্পৃক্ততা দেখিয়েছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। তারা ১২২টি প্রতিক্রিয়ায় অস্ত্র ব্যবহার করে। একই সময় ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন এবং আহত হন ৫০০ জনের বেশি। ৩ থেকে ৫ আগস্টে ৩২২ জনের মৃত্যুর তথ্য তৎকালীন সরকারের কারও দ্বারা অদৃশ্য হয়ে গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৫০টি থানার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২৬, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে ৫৭, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩২, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ১৮, ধানমন্ডি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৯, উত্তরার বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০, ধানমন্ডি ও উত্তরা ইবনে সিনা হাসপাতালে ২৩ এবং অন্যান্য কিছু হাসপাতালে ২৭ জন আন্দোলনে হতাহত হলে তা গোপন করা হয়। আর তাদের মৃত্যুকে পূর্ববর্তী অসুস্থতা বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক ঘটনার মধ্যে গত বছরের ১৯ জুলাইয়েও একটি মৃত্যুর তথ্য গোপন করা হয়। রাজধানীর মিরপুরে কাফরুল থানার সামনের সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় জানালা দিয়ে আসা একটি বুলেট ১১ বছরের সাফকাত সামিরের চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার খুলি ভেদ করে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে। ঘরে ছিল তার চাচা মশিউর রহমান (১৭)। তার কাঁধেও গুলি লাগে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, রায়েরবাগ কবরস্থানে ১১৪ জনকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিট থেকে ৯০০-এর বেশি মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কিছু সরকারি গেজেটে এসেছে এবং কিছু আসেনি।
লেখক : সিনিয়র রিপোর্টার, বাংলাদেশ প্রতিদিন