মিল্কিওয়ে (আমাদের গ্যালাক্সি) ও তার চেয়েও বড় অ্যান্ড্রোমেডা গ্যালাক্সি একে অপরের দিকে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে আসছে। বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই বলে আসছিলেন, এই দুই গ্যালাক্সির মধ্যে প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর পর ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটতে পারে। আর সংঘর্ষ ঘটলে আমাদের সৌরজগতের জন্য ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
কিন্তু আশার খবর হলো—এই মহাজাগতিক সংঘর্ষ আদৌ ঘটবে কিনা, সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। ‘নেচার অ্যাস্ট্রোনমি’ জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, এই সংঘর্ষ ঘটার সম্ভাবনা মাত্র ৫০ শতাংশ—মানে, এক কথায় বলা যায়, এটা অনেকটা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করছে।
ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক টিল সাওয়ালা ও তার আন্তর্জাতিক গবেষক দল এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন। তারা ১ লাখেরও বেশি কম্পিউটার সিমুলেশন চালিয়ে দেখেছেন, আগামী ১০ বিলিয়ন বছরের মধ্যে এই দুই গ্যালাক্সির সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় সমান—হবে কিংবা নাও হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, আগামি পাঁচ বিলিয়ন বছরের মধ্যে সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম। বরং বেশি সম্ভাবনা রয়েছে, গ্যালাক্সি দুটি কাছাকাছি এলেও তারা পরস্পরকে কেবল প্রদক্ষিণ করেই কাটিয়ে দেবে দীর্ঘ সময়—হতে পারে, কয়েক দশক বিলিয়ন বছর পর্যন্ত।
এর মানে এই নয় যে, আগে যেসব গণনা করা হয়েছিল, সেগুলো ভুল। বরং নতুন এই গবেষণায় আরও হালনাগাদ উপাত্ত (তথ্য) ব্যবহার করা হয়েছে এবং আশপাশের ছোট গ্যালাক্সিগুলোর প্রভাবও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি আমাদের বর্তমান জীবনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলছে না। কারণ, এর আগেই আমাদের সূর্য তার আয়ু শেষ করে পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলবে—সম্ভবত এক বিলিয়ন বছরের মধ্যেই।
গবেষক সাওয়ালার ভাষায়, ‘হয়তো আমরা চাইব না যে মিল্কিওয়ে ধ্বংস হোক, যদিও আমাদের জীবন বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এর কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই।’ গবেষণার শেষ কথা, ‘আমাদের গ্যালাক্সির ভাগ্য এখনো পুরোপুরি অনিশ্চিত।’
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল