সৌদি আরবকে ‘প্রধান নন-ন্যাটো মিত্র’ (Major Non-NATO Ally- MNNA) হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানের যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে হোয়াট হাউসে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মূলত দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্কের গভীরতাকে আরও শক্তিশালী করার পদক্ষেপ হিসেবে এই শ্রেণিকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এই ঘোষণার মাধ্যমে সৌদি আরব আনুষ্ঠানিকভাবে আমেরিকার ‘প্রধান নন-ন্যাটো মিত্র’ দেশগুলোর তালিকায় ২০তম রাষ্ট্র হিসেবে প্রবেশ করল। তালিকার অন্য দেশগুলো হলো- আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, মিসর, ইসরায়েল, জাপান, জর্ডান, কেনিয়া, কুয়েত, মরক্কো, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং তিউনিসিয়া।
এই শ্রেণিকরণের আওতায়- ন্যাটো সদস্য নয়, তালিকাভুক্ত এমন দেশগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ স্তরের সামরিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। মার্কিন কংগ্রেস ১৯৮৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র কোডের ২২নং অনুচ্ছেদের অধীনে এই মর্যাদা প্রদান শুরু করে।
ন্যাটো-বহির্ভূত প্রধান মিত্ররা যেসব সুবিধা পায়
ন্যাটো-বহির্ভূত প্রধান মিত্র দেশগুলো আমেরিকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ-সুবিধা লাভ করে। এর মধ্যে রয়েছে- উন্নত মার্কিন অস্ত্র এবং অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তিতে অগ্রাধিকার এবং কম দামে বা সহজ শর্তে অতিরিক্ত মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় বা লিজ নেওয়ার সুবিধা। এই মর্যাদা লাভ করলে ন্যাটো-বহির্ভূত প্রধান মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যৌথ অস্ত্র উৎপাদন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং সামরিক গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য মার্কিন তহবিল থেকে ঋণ সুবিধাও পেয়ে থাকে।
এই মর্যাদা আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও বেশ কিছু সুবিধা দেয়। ফলে আমেরিকা যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ এবং গোয়েন্দা সহযোগিতার সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও মিত্র দেশের ভূখণ্ডে জরুরি মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম সংরক্ষণের সুযোগ লাভ করে থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দীর্ঘ দিনের কৌশলগত অংশীদারত্বের কারণে সৌদি আরব কয়েক দশক ধরে এই সুযোগ-সুবিধার বেশিরভাগই কার্যতভাবে ভোগ করে আসছে। তবে বর্তমানে আনুষ্ঠানিক শ্রেণিকরণ আইনত সুবিধা প্রদান করবে, যা আর মার্কিন প্রশাসনের ইচ্ছা-অনিচ্ছার অধীন থাকে না।
‘যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি’র সঙ্গে এর পার্থক্য কী
‘প্রধান নন-ন্যাটো মিত্র’ এবং ‘পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’-এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। ‘ন্যাটো-অ-মিত্র’ উপাধির অধীনে মিত্র রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোনও প্রতিশ্রুতি নেই। বিপরীতে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি একটি স্পষ্ট আইনি বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করে, যা ন্যাটো চুক্তির ৫ অনুচ্ছেদের অনুরূপ, ফলশ্রুতিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সামরিক আক্রমণের শিকার যেকোনও সদস্য রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে বাধ্যবাধকতা তৈরি করে।
‘ন্যাটো-বহির্ভূত মিত্র’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধকরণে ঘনিষ্ঠ সামরিক ও অস্ত্র সহযোগিতা করতে বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির অধীনে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশটিকে রক্ষা করার জন্য মার্কিন বাহিনী পাঠানোর প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ করে।
অতএব, ‘প্রধান নন-ন্যাটো মিত্র’ মর্যাদা অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি ‘অত্যন্ত উন্নত কৌশলগত অংশীদারত্ব’, কিন্তু এটি ‘প্রতিরক্ষা জোট’ নয়। ‘যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি’ এর অর্থ হল স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রের উপর যেকোনও আক্রমণকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং আইনত আমেরিকাকে সামরিক হস্তক্ষেপের নির্দেশ দিতে বাধ্য করে।
সৌদি কর্মকর্তারা বলেছেন, এই শ্রেণিকরণ ‘একটি ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারত্বের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’। অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর নিশ্চিত করেছে যে, এটি ‘এই অঞ্চলে দীর্ঘ মেয়াদি পাস্পারিক নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি হিসেবে প্রতিফলিত হবে।”
মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী আরবি পত্রিকা ‘আশ-শারকুল আওসাত’ থেকে অনূদিত।
লেখক: অনুবাদক ও গবেষক
বিডি প্রতিদিন/একেএ