চব্বিশে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আহতদের চিকিৎসা ও সেবা দেওয়া সাহসী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার জুলাই ‘পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে এই কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। এতে তিনি ভিডিও বার্তা দেন।
ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যুদ্ধের সময়ও আক্রান্ত ও আহতদের চিকিৎসা বন্ধ করা যায় না, এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এর ব্যতিক্রম আমরা দেখেছি বাংলাদেশে ২৪ জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলোতে। ফ্যাসিস্ট সরকার শুধু ছাত্র-শ্রমিক-জনতার বুকে গুলি চালিয়েই থেমে থাকেনি, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে যেন কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা না পায়।
তিনি বলেন, জুলাইয়ে আমাদের চিকিৎসক-যোদ্ধাদের গল্প কোনো যুদ্ধক্ষেত্রের ডাক্তারদের গল্পকেও হার মানায়। রাস্তায় ছাত্রদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করে মেডিকেলেও ঢুকে তাদের ওপর হামলা হয়েছে। ডাক্তার-নার্সদের হুমকি-ধমকি ও নানা রকমের বাধা দেওয়া হয়েছে। শত শত ছেলে-মেয়ে অন্ধত্ব বরণ করেছে, কারণ তারা সঠিক সময়ে চিকিৎসা পায়নি। নির্দেশ ছিল, আন্দোলনে আহত কাউকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আপনারা গোপনে আহতদের চিকিৎসা দিয়েছেন। হাসপাতালেও গ্রেফতার অভিযান চালানো হয়েছিল, সিসিটিভি ফুটেজ, রেজিস্টার খাতা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। চিকিৎসক-নার্সরা তখন নিজের জীবন বিপন্ন করে আন্দোলনকারীদের চিকিৎসা করেছেন। তারা রোগীর কোনো তথ্য নথিভুক্ত পর্যন্ত রাখেননি, কারণ এসব তথ্যের সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হচ্ছিল। দিনরাত বিনা পারিশ্রমিকে গুলিবিদ্ধ আন্দোলনকারীদের চিকিৎসা করেছেন চিকিৎসকরা।
ড. ইউনূস বলেন, দুই চিকিৎসক বোন গ্যারেজে অস্থায়ী ক্লিনিক তৈরি করে চিকিৎসা দিয়েছেন। অনেকেই নিজেদের বাসায় অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্র করেছেন। আপনারা নিজেরা ঝুঁকিতে ছিলেন, পরিবারও ঝুঁকিতে ছিল। তবু পাহাড়সম বাধা পেরিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন। আহতদের রক্ত দরকার ছিল। প্রশাসনের রক্তচক্ষু এড়িয়ে আপনারা রক্তের ব্যবস্থা করেছেন। আহতদের পরিচয় গোপন রাখতে ব্যবস্থাপত্রে অন্য নাম ও রোগের তথ্য দিয়ে তাদের আড়াল করেছেন পুলিশের কাছ থেকে। আপনারা শুধু চিকিৎসক নন, আপনারা এই জুলাইয়ের অন্যতম নায়ক। সাহস, মানবতা ও দায়িত্ববোধের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। আপনারা যে সেবা দিয়েছেন তা জাতি কখনো ভুলবে না।
প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করে বলেন, এই আয়োজন থেকে নির্ভীক ডাক্তার ও সাহসী স্বাস্থ্যকর্মীদের গল্পগুলো উঠে আসবে, যা পুরো জাতিকে অনুপ্রেরণা জোগাবে।
ভিডিও বার্তার শুরুতেই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জাতির জন্য এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। নিহতদের আত্মার শান্তি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই দুর্ঘটনা আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেয়, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা শুধু পেশাজীবী নন, তারা আমাদের সংকটের সময়কার আশার আলো।
বিডি প্রতিদিন/কেএ