বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল সম্পদের অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্যে গেছে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল। এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। সেখানে তিনি বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল সম্পদের সন্ধানে যুক্তরাজ্য সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা চাইছেন।
তিনি লন্ডনে বলেন, আমাদের দুটি কাজের একটি হচ্ছে, গ্রামের মানুষদের কিভাবে আর্থিক খাতের সাথে সম্পৃক্ত করা যায় সেই বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা করা ও আমাদের জন্য শিক্ষা নেওয়া। আরেকটি কাজ হচ্ছে, আমাদের সম্পদ উদ্ধারের কাজ। দেশ থেকে যে সম্পদ পাচার হয়েছে তার কিছুতো লন্ডনে এসেছে, আমরা জানি সেটা। এজন্য এখানকার রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সিভিল সোসাইটি, ল' ফার্মের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছি।
সম্পদ ফেরত নেওয়ার বিষয়ে আশা প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, আন্তর্জাতিক যে এক্সপেরিয়েন্স (অভিজ্ঞতা) আমরা দেখেছি, সম্পদ ফেরত নেওয়া সম্ভব। নাইজেরিয়া পেরেছে, মালয়েশিয়াও পেরেছে, এ্যাঙ্গোলাতো ১৫.৭ বিলিয়ন ডলার ফেরত নিয়েছে। সবই তাদের প্রাক্তন শাসকদের কাছ থেকে ফেরত নিয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি হতে পারে।
তিনি বলেন, ব্রিটেনের বেশ কয়েকটি আইনি পরামর্শ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশের কথা হয়েছে, তারাও আশাবাদী বাংলাদেশের সম্পদ ফেরানোর বিষয়ে।
গভর্নর সন্দেহ করছেন, হাসিনা সরকারের সহযোগীরা যে সম্পদ লুট করেছে, তার একটি অংশ যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি কেনার কাজে ব্যবহার হতে পারে।
শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হচ্ছিল বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
গভর্নর আরও বলেন, গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ ভালো করেছে। রিজার্ভ স্থিতিশীল, এক্সচেঞ্জ রেইট ভালো হয়েছে। এমনকি রমজানে বাজার স্থিতিশীল আছে, বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই।
এদিকে, ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, ব্রিটিশ এমপিরা আশঙ্কা করছেন- বাংলাদেশের অর্থপাচার তদন্ত নিয়ে ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের (এমপি) বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হতে পারে। তারা জানিয়েছেন, তদন্তে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য’ সংবলিত ইমেইল পেয়েছেন তারা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুরকে নিয়ে সন্দেহজনক ই-মেইল পেয়েছেন ব্রিটিশ এমপিরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এই কর্মকর্তা বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন।
ব্রিটিশ এমপিরা বলছেন, দুর্নীতি তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করতে ভুয়া সাংবাদিকরা ড. মনসুরকে নিয়ে অপপ্রচার শুরু করেছে। তারা আশঙ্কা করছেন- এতে বাংলাদেশকে ব্রিটেনের সহায়তা করার প্রচেষ্টা আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
যুক্তরাজ্যের ‘অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ’ (এপিপিজি)-এর ৪৭ জন এমপির একটি দল সোমবার আহসান মনসুরের সঙ্গে বৈঠকের আগে কিছু ই-মেইল পান। কিছু ভুয়া ছবি ব্যবহার করে ভুয়া সাংবাদিক পরিচয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেওয়া হয় ওই মেইলে। এটি আহসান মনসুরকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য পরিকল্পিত প্রচারণার অংশ হতে পারে বলে মনে করছেন এমপিরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, যারা মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তের আওতায় রয়েছে, তারা আমার সুনাম নষ্ট করতে এবং আমাকে বিভিন্নভাবে টার্গেট করতে চাইছে।
এদিকে, এপিপিজির সদস্য রুপা হক একটি পৃথক ই-মেইল পেয়েছেন। রুপা হক বলেছেন, এটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক যে, আমি এমন একটি ই-মেইল পেয়েছি। এটি আমাদের কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে এক ধরনের প্রচেষ্টা। বিষয়টি পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র কমিটির নজরে এনেছেন এমপিরা। তারা এই বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার বিষয়ে তদন্ত করছে।