সপ্তাহজুড়ে সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষের পর অবশেষে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছে। কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় দোহায় অনুষ্ঠিত আলোচনার পর রবিবার উভয় দেশ এই সমঝোতায় সম্মত হয়।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উভয় পক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে এবং টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে স্থায়ী প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ লিখেছেন, আফগান ভূখণ্ড থেকে সীমান্তপারের সন্ত্রাস এখনই বন্ধ হবে। উভয় দেশ পরস্পরের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করবে।
তিনি আরও জানান, যুদ্ধবিরতির পরবর্তী বৈঠক ২৫ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার বিস্তারিত বিষয়ে আলোচনা হবে।
আফগান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদও চুক্তিটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, উভয় দেশ পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশী সম্পর্ক বজায় রাখবে। একে অপরের বিরুদ্ধে কোনো শত্রুতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে না কিংবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সমর্থন দেওয়া হবে না।
১১ অক্টোবর আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তান দাবি করে, আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানের ভেতরে হামলার পেছনে থাকা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে তারা কাবুল ও পাকতিকা প্রদেশে বিমান হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় অনেক বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়।
দুই দেশের মধ্যে এই সংঘাত ছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক সপ্তাহের লড়াইয়ে অনেক মানুষ নিহত হয়েছেন। শতাধিক আহত হয়েছেন।
ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে আফগানিস্তানের মাটিতে তেহরিকই তালেবাম পাকিস্তান (টিটিপি) এবং বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) নামের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আশ্রয় পাচ্ছে। সেখান থেকে তারা পাকিস্তানের ভেতরে হামলা চালানো হচ্ছে।
২০২৫ সাল এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বছর হিসেবে দেখা হচ্ছে। সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (সিআরএসএস)-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা ২৪ শ' ছাড়িয়েছে। আর এসব অনেক হামলার দায় স্বীকার করেছে টিটিপি।
আফগান তালেবান সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাদের মাটি কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। মুজাহিদ বলেন, এটি ইসলামী আমিরাতের সুসংগত নীতি, আমরা অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে হামলাকে সমর্থন করি না এবং করব না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবদুল্লাহ বাহির বলেন, বোমা হামলা কখনো স্থায়ী সমাধান নয়। যুক্তরাষ্ট্র বিশ বছর ধরে এই পদ্ধতিতে সফল হয়নি, পাকিস্তানও তা পারবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি যুদ্ধবিরতি আনলেও পারস্পরিক অবিশ্বাস দূর না হলে শান্তি টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।
সূত্র: আল জাজিরা
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল