গরমে মানুষের নানা সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যাগুলোর অধিকাংশই খাবারদাবার থেকে শুরু হয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাই তারা এই সময়ে খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে বলেন।
গরমের সময়ে কিছু খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা বা কম খাওয়া উচিত। এছাড়া আরো কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খেতে কোনো সমস্যা হবে না। আর সেগুলো জানাতেই আজকের প্রতিবেদন। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
যেসব খাবার কম খাওয়া উচিত
কিছু খাবার আছে, যেগুলো খেলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গরম অনুভূত হতে পারে। পুষ্টিবিদরা এমনই কিছু খাবার সম্পর্কে জানিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে-
মশলাজাতীয় খাবার : বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মশলাজাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করলেও গরমের সময় ‘ভুনা মাছ বা মাংস’ খাওয়া এড়াতে হবে। কারণ এ ধরণের খাবার হজম করতে বেশি সময় লাগে। শরীরে বিপাক প্রক্রিয়া যদি বেশি সময় ধরে চলে, তখন গরম লাগতে শুরু করে।
ডিম : শরীরে প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপায় হচ্ছে ডিম। কিন্তু গরমের সময় ডিম খেলে অনেকের সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে যাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, কিংবা উচ্চ রক্তচাপ আছে, তারা চাইলে ডিম এড়িয়ে যেতে পারেন। ডিমের পরিবর্তে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে তারা তাদের খাদ্যতালিকায় নিয়মিত মাছ কিংবা মুরগির মাংস রাখতে পারেন।
আইসক্রিম ও কোমল পানীয় : অনেকে মনে করেন, আইসক্রিম ও ঠাণ্ডা বোতলজাত কোমল পানীয় খেলে গরম কম লাগবে। কিন্তু এগুলো খেলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্যই আইসক্রিম কিংবা কোমল পানীয় খাওয়ার পরপর তৃষ্ণার্ত বোধ করে মানুষ।
ফাস্টফুড : ফাস্টফুড নিয়ে বছরের পর বছর ধরে বহু আলোচনা-সমালোচনা চললেও মানুষ বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ফ্রায়েড চিকেন, পিৎজা ইত্যাদি হরহামেশা খেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু গরমের সময়ে তো বটেই, সাধারণ সময়েও এগুলো খাওয়া উচিত নয়। কারণ এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণ শর্করা ও চর্বি থাকায় হজম করতে সময় লাগে। ফলে, এগুলো রক্তচাপকে প্রভাবিত করে, প্রদাহ বাড়ায়।
ডুবো তেলে ভাজা খাবার: ডুবো তেলে ভাজা খাবার ও অতিরিক্ত তেলেভাজা খাবার মুখরোচক হলেও তা শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়। এ ধরনের খাবার গরমে এড়িয়ে চলতে হবে। ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি করে।
চা-কফি : শীতকালে শরীর গরম রাখার জন্য অনেকে চা-কফি পান করেন। কিন্তু যে চা-কফি শীতকালে শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে, তা নিশ্চয়ই গরমকালেও একই ভূমিকা পালন করবে। তাই, গরমকালে অতিরিক্ত চা-কফি পান করা উচিত নয়। কারণ চা বা কফির ক্যাফেইন দেহকে পানিশূন্য করে ফেলে এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে।
দুগ্ধজাতীয় খাবার : গরমকালে দুধ জাতীয় খাবার, যেমন মেয়োনেজ বা বিভিন্ন শেক খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ গরমের সময় এ জাতীয় খাবারে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত হয়।
স্টেক : অনেকেই রেস্টুরেন্টে গিয়ে স্টেক খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু স্টেক যদি সম্পূর্ণরূপে রান্না করা না হয়, তাহলে তার মাঝে ব্যাকটেরিয়া থেকে যেতে পারে। তাই, এক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
তেল-চর্বি জাতীয় খাবার : গরুর মাংস, হাঁসের মাংস, খাসির মাংস কার না পছন্দ? কিন্তু গরমের সময় এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে চর্বি থাকে। সেই সঙ্গে সুস্থ থাকার জন্য পোলাও, বিরিয়ানি, তেহারি ইত্যাদি তেলযুক্ত খাবারকেও না বলা উচিত।
অতিরিক্ত চিনি ও লবণ : চিনি ও লবণ, এ দুটি জিনিস এমনিতেই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু গরমের সময় সেই ক্ষতির মাত্রাটা আরো বেশি হয়ে দাঁড়ায়। এ সময় অতিরিক্ত চিনি ও লবণ খেলে শরীরে অস্বস্তি হতে পারে। তাই, গরমে প্যাকেট জাতীয় খাবার বা প্রসেসড ফুড খাওয়া একদমই উচিত নয়।
গরমে যেগুলো খাওয়া যেতে পারে
কম মশলাজাতীয় খাবার : মশলাজাতীয় ভারী খাবার খেতে ভালো লাগলেও গরমের সময় কম মশলাজাতীয় খাবারের ওপর জোর দিতে হবে। কারণ এগুলো সহজে হজমযোগ্য।
শাক-সবজি : বাজারে এখন ঝিঙা, চালকুমড়া, লাউ, চিচিঙ্গা, সজনে ডাঁটা, শাকের ডাঁটা ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোকে যদি পাতলা ঝোল করে রান্না করে খাওয়া হয়, তাহলে এগুলো একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা জোগাবে, অপরদিকে শরীরে গরম অনুভব করাবে না।
পাতলা স্যুপ : স্যুপকে অনেকে মজা করে রোগীর খাবার বলে থাকেন। কিন্তু গরমের সময় একদম ‘ক্লিয়ার ভেজিটেবল’ স্যুপ (পাতলা করে সবজি স্যুপ) খেলে তা শরীরের জন্য উপকারী।
নিরাপদ পানি : গরমে নিরাপদ পানি পানের কোনো বিকল্প নেই। কারণ গরমের সময় ঘাম ও প্রস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে সোডিয়াম, পটাশিয়াম বের হয়ে যায়। একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার বা ১২ থেকে ১৩ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
ডাবের পানি : শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করতে এবং ইলেকট্রলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে ডাবের পানি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের পক্ষেই প্রতিদিন ডাব কিনে খাওয়া প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। সেক্ষেত্রে তারা বিকল্প হিসেবে স্যালাইন পানি খেতে পারেন।
লেবু পানি : গরমের সময় লেবুর শরবত পান করলে তা শরীরের ক্লান্তি দূর করবে। সেক্ষেত্রে একদম সাধারণ পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। তবে যাদের হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ নেই, তারা স্বাদের জন্য সামান্য লবণও ব্যবহার করতে পারেন।
ফলমূল : গরমে শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করার জন্য ফলমূল খাওয়া উচিত। স্ট্রবেরি, শসা, জাম ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। তবে বাংলাদেশের বাজারে এই সময়ে তরমুজে ভরপুর থাকে। তাই, গরমের ফল হিসেবে তরমুজ খাওয়া যেতে পারে। কারণ তরমুজে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পানি থাকে।
কাঁচা আমের শরবত : কাঁচা আমের মাঝে ভিটামিন-সি থাকে। কাঁচা আমের সঙ্গে মরিচ যুক্ত না করে যদি এটিকে শরবত হিসেবে খাওয়া যায়, তাহলে গরম কম অনুভব হতে পারে।
টক দই : পাকস্থলীকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন টকদই খাওয়া যেতে পারে। টক দই খালিও খাওয়া যায়, আবার টক দইকে পানি দিয়ে গুলিয়েও খাওয়া যায়। অথবা, টক দইয়ের সঙ্গে শসাও খাওয়া যেতে পারে।
ডিটক্স ওয়াটার : গরমের সময় ভারী খাবারের পর ডিটক্স খাবার খাওয়া যেতে পারে। ডিটক্স ওয়াটার হলো- পানি, লেবুর রস, শসা, গাজর, পুদিনা ইত্যাদির রসের সমন্বয়ে তৈরি এক ধরনের পানীয়। তবে সবার ক্ষেত্রে যে খাবারটি ভালো হবে তা কিন্তু না। যেমন, অনেকের শসা খেলে সমস্যা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ