ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বামপন্থি দলগুলোর মধ্যে একটি ঐক্যবদ্ধ জোট গঠনের আলোচনা চললেও, বাস্তবে সেই উদ্যোগে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। প্রাথমিকভাবে একাধিক ছোট ছোট বাম দল ও প্রগতিশীল সংগঠন ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্মে একত্রিত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও, মতপার্থক্য ও নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় কার্যত ভাটা পড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আদর্শিক ঘনিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক কৌশল, নেতৃত্ব কাঠামো এবং নির্বাচনি সমীকরণে মতানৈক্যই স্থবিরতার মূল কারণ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বামদের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতে হলে একটি সুসংগঠিত ও কার্যকর জোট গঠন জরুরি ছিল বলেই তারা মনে করছেন।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের এক নেতার ভাষ্য অনুযায়ী, ‘আলোচনা চলছে, অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু এখনই জোটের ঘোষণা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আরও আলোচনা করা প্রয়োজন। আমাদের জোটে আসতে অনেক দলই আগ্রহী। অনেক দল নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে চাচ্ছে, ফলে সমঝোতা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দরজা এখনো পুরোপুরি বন্ধ নয়।’
জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘বাম, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, উদারনৈতিক ও স্বাধীনতার পক্ষের’ রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি নতুন জোট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ও বাংলাদেশ জাসদের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, নতুন জোট গঠন প্রক্রিয়ায় শামিল হয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা, বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম, জাতীয় গণফ্রন্ট, ঐক্য ন্যাপ এবং প্রগতিশীল আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এসব জোট ও দল নিজেদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, দলিত ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একাধিক সংগঠন এবং গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক গণসংগঠনের সঙ্গেও তাদের আলোচনা চলছে। এ প্রসঙ্গে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখনো আলোচনার মধ্যেই রয়েছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী বামমোর্চার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ জাসদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। আমরা যৌথভাবে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবো বলে আশা করছি।’
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দীর্ঘদিনের আধিপত্য সর্বজনবিদিত। এই দুই দলের বাইরে দেশের জনগণের একটি বড় অংশ একটি কার্যকর বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির সন্ধান করে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, গণতন্ত্রের দুর্বলতা এবং সুশাসনের অভাবের মতো সমস্যাগুলো জনগণের মধ্যে হতাশা বাড়িয়ে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে বাম-প্রগতিশীল দলগুলোর প্রধান লক্ষ্য হলো এই হতাশাগ্রস্ত মানুষকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা এবং তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে জোরদার করা। তারা মনে করে, একটি ঐক্যবদ্ধ জোটের মাধ্যমেই এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে জোট গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বিল্পবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি। বামজোট ও গণতন্ত্র মঞ্চের বাইরেও বাম প্রগতিশীল দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। কিছুদিন পর আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারবো।’
জোট গঠনের নেতারা বলছেন, এই জোট গঠন হলে সেটি নির্বাচনি জোটে রূপ দেওয়া হবে। এর আগে কর্মসূচিভিত্তিক জোট হবে। বিভিন্ন ইস্যুতে কর্মসূচি দিয়ে দলগুলো জোটবদ্ধভাবে মাঠে নামবে। এরপর আগামী নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। এদিকে নতুন এই জোটের পাশাপাশি সিপিবি-বাসদের নেতৃত্বে বাম গণতান্ত্রিক জোট নামে যে প্লাটফর্ম রয়েছে বা ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম জোট, এ জোটগুলোও আলাদা যেভাবে আছে নিজস্ব স্বতন্ত্র বজায় রেখে থাকতে পারবে। এই জোটগুলোতে যে দল রয়েছে সে দলগুলো নতুন জোটেও ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে বলে জানা গেছে।