জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পবিত্র রমজানের কারণে অমর একুশে বইমেলা আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা একাডেমি। গত বৃহস্পতিবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমানের সভাপতিত্বে বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন প্রকাশকরা। ভাষার মাসের মেলা বিজয়ের মাসে আয়োজনের সিদ্ধান্তকে একটি অবিবেচক সিদ্ধান্ত বলেও অভিহিত করেছেন তারা। বইমেলার স্থায়ী ও কার্যকর কোনো নীতি প্রণয়ন না করে এবং সৃজনশীল ও বৈষম্যবিরোধী প্রকাশকদের মতামত না নিয়েই দেড় মাস এগিয়ে এই তারিখ নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট মহলে চরম ক্ষোভ ও শঙ্কা বিরাজ করছে প্রকাশকদের মাঝে। তারা জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যে বইমেলা আয়োজিত হয়েছে তা ব্যবসায়িকভাবে চরম একটি ব্যর্থতার মেলার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিল। একই বছরের ডিসেম্বরে আরেকটি বইমেলা হলে তাও চরম ব্যর্থতার গ্লানি বয়ে বেড়াতে হবে বলে মনে করেন তারা। তাই প্রকাশকরা ২০২৬-এর ৮ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা আয়োজনে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
সৃজনশীল প্রকাশকদের মতে, বর্তমানে সৃজনশীল প্রকাশনা জগতে এক নীরব দুর্ভিক্ষ বিরাজ করছে। এখন আরেকটি সুপার ফ্লপ মেলা অনুষ্ঠিত হলে প্রকাশকরা আর্থিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন। তারা বলেন, সৃজনশীল প্রকাশকদের যে তিনটি সংগঠন রয়েছে তার নেতারা ও সাধারণ প্রকাশকদের সঙ্গে বসে একটা সমাধানে আসা দরকার। তা না করে বাংলা একাডেমি মূলত ভিন্ন পেশাজীবী যেমন অবৈধ নোট বই, গাইড বইয়ের প্রকাশক ও লাইব্রেরিগুলোর নেতৃত্বদানকারী সংগঠনের সঙ্গে বসে বিগত মেলা থেকে একটার পর একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে আসছে।
নতুন সময়সূচির সিদ্ধান্ত গ্রহণে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর প্রকাশকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রকাশক। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশক সমিতির সভাপতি সাঈদ বারী বলেন, আমাদের প্রস্তাব হলো মেলা ৮ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হোক। এতে লেখক-প্রকাশক প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবেন, মানসম্মত বই প্রকাশ হবে, আর পাঠক পাবেন এক প্রাণবন্ত উৎসবের আমেজ। বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন সানু বলেন, ফেব্রুয়ারির সঙ্গে একুশের চেতনার অবিচ্ছেদ্য যোগ রয়েছে। ডিসেম্বর মাসে মেলা করলে সেই ঐতিহ্য ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
মহাকাল প্রকাশক মৃধা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বাংলা একাডেমির এই আচরণে আমরা হতাশ বাংলা একাডেমির মেলা হচ্ছে সৃজনশীল পুস্তকের মেলা। এ মেলার ভালো-মন্দ বিষয়গুলো সৃজনশীল প্রকাশকরাই ভালো বুঝবেন। বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হাসান জানান, বাংলা একাডেমি সৃজনশীল প্রকাশকদের দুটি সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশক সমিতি’ ও ‘বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি’-এর সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই আগামী একুশে বইমেলার তারিখ ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. গফুর হোসেন বলেন, বাংলা একাডেমি আবারও প্রমাণ করল, তাদের কাছে এই বইমেলা কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেই অমর একুশে বইমেলা হওয়া উচিত।