দেশের গ্লোব বায়োটেকের তৈরি করা কভিড-১৯ টিকা বঙ্গভ্যাক্স যুক্তরাষ্ট্র্রের পেটেন্ট (মেধাস্বত্ব) পেয়েছে। বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো টিকা যুক্তরাষ্ট্রে পেটেন্ট পেল বলে গ্লোব বায়োটেকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
গতকাল তেজগাঁও শিল্প এলাকায় গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় প্রতিষ্ঠানটি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের সিইও ড. কাকন নাগ, সিওও ড. নাজনীন সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার প্রমুখ।
গ্লোব বায়োটেক জানায়, করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বব্যাপী মানুষ যখন দিশাহারা, তখন জাতীয় প্রয়োজনে গবেষণা শুরু করে তারা। বিজ্ঞানী কাকন নাগ ও নাজনীন সুলতানার তত্ত্বাবধানে তৈরি হয় কভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট, ওষুধ এবং টিকা। এই গবেষণার ফলেই আবিষ্কৃত হয় বিশ্বের প্রথম এক ডোজের কার্যকর এমআরএনএ টিকা বঙ্গভ্যাক্স।
২০২০ সালে টিকাটির সম্পূর্ণ কোডিং সিকুয়েন্স প্রকাশিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের এনসিবিআই ডেটাবেসে। পরে এর গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিকেল জার্নাল ভ্যাকসিন এবং সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও একই বছরে এটিকে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
গ্লোব বায়োটেক সূত্র জানায়, বানরের ওপর পরিচালিত ট্রায়ালে বঙ্গভ্যাক্স নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি ছিল প্রাণীর ওপর পরিচালিত প্রথম ভ্যাকসিন ট্রায়াল। গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৫ সালে পথচলা শুরু করে গ্লোব বায়োটেক। ক্যানসার, আর্থ্রাইটিস, রক্তস্বল্পতা, উচ্চরক্তচাপ, অটোইমিউন ডিজিজসহ দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসায় বায়োলজিক্স ও নতুন প্রজন্মের ওষুধ উদ্ভাবনের লক্ষ্যেই গড়ে ওঠে গবেষণাগারটি।
প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বঙ্গভ্যাক্স এক ডোজেই করোনার বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকর। টিকাটি প্রস্তুতে ব্যবহার করা হয়েছে ন্যানোটেকনোলজি-ভিত্তিক নিজস্ব মৌলিক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতে শুধু এমআরএনএ নয়, বরং ডিএনএ, প্রোটিন সাবইউনিট, নিষ্ক্রিয় ভাইরাস বা রিকম্বিন্যান্ট ভাইরাসভিত্তিক টিকাও তৈরি করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের মতো রোগের আধুনিক ওষুধ তৈরিতেও এর প্রয়োগ ঘটানো যাবে।