খুলনার বটিয়াঘাটার গাওঘড়া রাজা খাঁর বিল। রোদ-বৃষ্টির মাঝে দূর থেকেই বিলে কৃষকের ব্যস্ততা চোখে পড়ে। ঘেরের আইলে মাচা করে তাতে তরমুজের আবাদ করা হয়েছে। কমলা রঙের নেটের ব্যাগে থরে থরে ঝুলছে পাকা তরমুজ। এবার বিলের প্রায় ৫০০ একর জমিতে বর্ষাকালীন অফ সিজনের তরমুজ আবাদ হয়েছে। দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে প্রতিটি গাছে তরমুজ আসতে শুরু করে। এর মধ্যে ফলন্ত তরমুজ বিক্রিও শুরু করেছেন কৃষকরা।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, খুলনায় প্রথমবারের মতো বর্ষাকালীন অফ সিজনের তরমুজ চাষে সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। বর্ষায় নিচু জমিতে পানি জমলে ঘেরের পাড়ে মাচায় তরমুজের চাষ করে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। তরমুজ চাষে এক বিঘা জমিতে দুই থেকে আড়াই মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে চাষিদের। কৃষক আবদুর রহমান জানান, এক বিঘা জমিতে তরমুজ চাষে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। মাত্র দুই থেকে আড়াই মাসে প্রতি বিঘা জমিতে তরমুজ চাষে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ হয়। এদিকে, অসময়ের তরমুজের চাহিদা বেশি থাকার কারণে দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা বটিয়াঘাটা থেকে তরমুজ সংগ্রহ করছেন। চাহিদা থাকায় দামও বেশি পাচ্ছেন চাষিরা। চলতি বছরে বটিয়াঘাটা, রূপসা, দিঘলিয়া, দাকোপ, ডুমুরিয়ায় অফ সিজনের তরমুজ চাষে সফলতা মিলেছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। বটিয়াঘাটা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. আলমগীর হোসেন জানান, মে মাসের দিকে তরমুজের বীর রোপণ করা হয়। আগস্টের মাঝামাঝি তরমুজ বিক্রি করেন কৃষকরা। এর আগে প্রশিক্ষণ ও বীজ প্রদানের মাধ্যমে চাষিদের তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। অপরদিকে অসময়ে তরমুজ চাষ লাভজনক হওয়ায় খোরপোষ কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হওয়ার কথা বলছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, লাভজনক হওয়ায় তরমুজ চাষে দিন ফিরেছে কৃষকদের। এক সময় বিলটিতে লবণ পানিতে চিংড়ি চাষ হতো।
আর্থিক ক্ষতিতে দিশাহারা ছিলেন কৃষকরা। আর এখন তরমুজ চাষে সেই জমিতে সোনা ফলছে। বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে খুলনায় ৯৬৬ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। এ থেকে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। একই জমিতে দুই ধাপে আগাম তরমুজ চাষ করছেন চাষিরা। এতে শস্যের নিবিড়তা যেমন বাড়ছে, তেমনি লাভবান হচ্ছেন চাষিরা, জানান তিনি।