সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদাপাথর লুটপাটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৪২ রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তালিকায় বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নাম রয়েছে। এ ছাড়া লুটপাটে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবির নিষ্ক্রিয়তা ও সহযোগিতা ছিল। ১৩ আগস্ট সাদাপাথর এলাকায় এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালিয়ে দুদক এসব তথ্য জানতে পেরেছে। দুদক সিলেটের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম সেখানে অভিযান চালায়। পরে অভিযানে পাওয়া যাবতীয় তথ্য প্রতিবেদন আকারে ঢাকায় পাঠানো হয়। এ ঘটনার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সিলেটের রাজনীতি। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, এনফোর্সমেন্ট অভিযানের পর টিমের সদস্যরা একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে গতকাল সিলেটের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. সারওয়ার আলম। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের জানান, সবার সহযোগিতায় সিলেটকে একটি সুন্দর জেলা হিসেবে গড়তে তিনি কাজ করবেন। আইনশৃঙ্খলা, পরিবেশ, পর্যটন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে তিনি কাজের মাধ্যমে অগ্রাধিকার দিতে চান। প্রকৃতিকন্যা সিলেট যেন প্রকৃতির মতো সুন্দর থাকে এজন্য তিনি সবার সহযোগিতা চান। দুদক সূত্র জানায়, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে অসাধু ব্যক্তিরা যোগসাজশ করে সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্র থেকে কয়েক শ কোটি টাকার পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করে নেয়। ছয়টি ক্যাটাগরিতে পাথর লুটে জড়িত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় এবং সরকারি সংস্থাগুলোর কার কী ভূমিকা ছিল, তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি), বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নিষ্ক্রিয়তা, লুটেরাদের কাছ থেকে কমিশন নেওয়াসহ নানা অভিযোগ আনা হয়েছে। লুটপাট ঠেকাতে সিলেটের সদ্য বদলি হয়ে যাওয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের সদিচ্ছার অভাব, অবহেলা, ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা ছিল বলে দুদক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্র রক্ষায় সঠিক দিকনির্দেশনা দিতেও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। লুটপাট চলাকালে বিভিন্ন সময়ে উপজেলাটিতে চারজন ইউএনও দায়িত্বরত ছিলেন। তারা হলেন- আবিদা সুলতানা, ঊর্মি রায়, মোহাম্মদ আবুল হাছনাত ও আজিজুন্নাহার। এদিকে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী পাথর লুটপাটকে প্রশ্রয় দিয়েছেন বলে দুদক উল্লেখ করেছে। প্রতিবেদনে পাথর লুটপাটে ৪২ জন রাজনীতিক, পাথর ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা এনফোর্সমেন্ট অভিযানকালে পাওয়া গেছে বলে দুদক উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে বিএনপির ২১ জন (একজন বহিষ্কৃত নেতা), জামায়াতের দুজন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দুজন, আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) সাতজন রয়েছেন। বাকিদের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। দুদক সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, এনসিপির জেলা প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন, মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি (পদ স্থগিত) সাহাব উদ্দিনের নাম আছে। এ ছাড়া পাথর ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য হাজী কামাল, উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি লাল মিয়া, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে দুদু, জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমদ বাহার ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুসতাকিন আহমদ ফরহাদ, আওয়ামী লীগের কর্মী বিলাল মিয়া, শাহাবুদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিনের নাম রয়েছে। তালিকায় থাকা অন্যরা হলেন- উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক দুলাল মিয়া ওরফে দুলা, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রজন মিয়া, যুবদল নেতা জসিম উদ্দিন ও তার ভাই সাজন মিয়া, উপজেলা বিএনপির কর্মী জাকির হোসেন, সদস্য মোজাফর আলী ও মানিক মিয়া, আওয়ামী লীগের কর্মী মনির মিয়া (অন্য মামলায় সম্প্রতি গ্রেপ্তার), হাবিল মিয়া ও সাইদুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল ওদুদ আলফু, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মকসুদ আহমদ, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পদ স্থগিত) রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহপরান ও বহিষ্কৃত কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপন, জেলা যুবদলের বহিষ্কৃত সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম এবং গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্স। সংবাদ সম্মেলন করে পাথর লুটের সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।
শিরোনাম
- যশোর সীমান্তে এক ভারতীয়সহ দুই চোরাকারবারি আটক
- সূচকের মিশ্র প্রবণতায় পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন
- বাইউস্টে নবীন শিক্ষার্থীদের অরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত
- প্রেমিকের সঙ্গে স্ত্রী পালিয়ে যাওয়ায় দুধ দিয়ে গোসল প্রবাসীর
- নাইক্ষ্যংছড়িতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় যুবক আটক
- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বৃত্তি
- বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে নবনিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
- ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিলো স্পেন
- বিশ্ব ডাক দিবস আজ
- রাজধানী ঢাকায় আজ কোথায় কোন কর্মসূচি
- দক্ষিণ সুদানে ‘ত্রিভুজ প্রেম’ নিয়ে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ১৪
- ১৩শ ইহুদিসহ ইসরায়েলি মন্ত্রীর আল আকসায় প্রবেশের নিন্দা সৌদি আরবের
- হার দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ
- স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ আর নেই
- এখন গণভোট আয়োজন জাতীয় নির্বাচনকে পেছানোর প্রয়াস: সালাহউদ্দিন আহমদ
- ফার্মগেটে হলিক্রস কলেজের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ
- জিয়াউর রহমানের সমাধিতে কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া করলেন খালেদা জিয়া
- ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ বাংলাদেশি শ্রমিক নিহত
- শ্রমবাজার সম্প্রসারণে ভিসা জটিলতা দূর করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
- ইসরায়েলি কারাগারে বিনাবিচারে ফিলিস্তিনির মৃত্যু
প্রকাশ:
০০:০০, শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫
আপডেট:
০২:১২, শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫
পাথরকাণ্ডে উত্তপ্ত সিলেটের রাজনীতি
দুদকের প্রতিবেদনে ৪২ রাজনীতিবিদ প্রভাবশালীর নাম
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও সিলেট
প্রিন্ট ভার্সন

টপিক
এই বিভাগের আরও খবর