ছুটি না নিয়ে মাসের পর মাস স্কুলে অনুপস্থিত। কেউ পরিবার নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। চাকরি থেকে ইস্তফা না দিয়ে বিদেশ যাওয়ায় স্কুলগুলোতে দেখা দিয়েছে শিক্ষকশূন্যতা। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। ছুটি না নিয়ে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় গেল ২১ মাসে ১৬৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। এর মধ্যে বেশির ভাগকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডায় পারিবারিক ও কাজের ভিসায় সিলেটের কয়েক হাজার মানুষ পাড়ি জমান। ভ্রমণ ভিসায় গিয়ে সেখানে ‘অ্যাসাইলাম’-এর আবেদন করে থেকে যান। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে কেয়ারগিভারসহ বিভিন্ন ধরনের কাজের ভিসায় পরিবার নিয়ে যান অনেকে। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ছিলেন। যাওয়ার সময়ও তারা কর্মস্থল থেকে ছুটি নেননি। কেউ কেউ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে স্বল্পমেয়াদি ছুটি নিয়ে গোপনে বিদেশ চলে যান। এরপর মাসের পর মাস অনুপস্থিত থাকেন। এদিকে, ৬০ দিনের বেশি কর্মস্থলে যারা অনুপস্থিত তাদের ব্যাপারে তদন্তে নেমে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস অনেক শিক্ষকের বিদেশ পাড়ি জমানোর তথ্য পায়। সূত্র মতে, গত পাঁচ বছরে সিলেট বিভাগে এভাবে ছুটি ছাড়াই সহস্রাধিক শিক্ষক বিদেশ চলে গেছেন। তদন্তসাপেক্ষে এদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬৩ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪০ জনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। আর ২৩ জনের মামলা চলমান।
নিষ্পত্তি হওয়া মামলার অভিযুক্তদের বেশির ভাগকেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
শিক্ষা অফিসের ২১ মাসের তথ্য অনুযায়ী, ৬০ দিনের বেশি সময় ধরে অনুপস্থিত থাকাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষক রয়েছেন বিশ্বনাথ ও বিয়ানীবাজারে। এ সময়ের মধ্যে বিশ্বনাথ উপজেলার ২৪ জন ও বিয়ানীবাজার উপজেলার ২০ জন শিক্ষক রয়েছেন। এ ছাড়া অন্য উপজেলাগুলোর মধ্যে সিলেট সদরের ১৬ জন, বালাগঞ্জের ১১ জন, ফেঞ্চুগঞ্জের চারজন, গোলাপগঞ্জের ১২ জন, জকিগঞ্জের ১৬ জন, কানাইঘাটের সাতজন, জৈন্তাপুরের চারজন, গোয়াইনঘাটের ১০ জন, কোম্পানীগঞ্জের একজন, দক্ষিণ সুরমার ১৮ জন ও ওসমানীনগরের ২০ জন শিক্ষক রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক শাখাওয়াত এরশেদ জানান, যারা ছুটি ছাড়া ৬০ দিনের অধিক কর্মস্থলে অনুপস্থিত তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। ২০২৪-২৫ সালে এরকম অভিযোগে ১৬৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।