দেশের উত্তরাঞ্চলে নদনদীর পানি কমতে থাকায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে রয়েছে। তবে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র পূর্বাভাস দিয়েছে, মধ্যাঞ্চলে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে করে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। নওগাঁ এবং আত্রাই নদী-সংলগ্ন এলাকাও প্লাবিত হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, এখন নওগাঁর আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় তা বিপৎসীমার ওপরেই থাকবে। এরপর পানি কমতে পারে। নওগাঁ জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যার ঝুঁকি রয়েছে। পদ্মা নদীর পানি আরও দুই দিন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এর ফলে পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলাগুলো প্লাবিত হবে। যমুনা নদী-সংলগ্ন এলাকা টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও পাবনা এলাকায়ও পানি বাড়তে পারে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কুড়িগ্রাম : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের টানা প্রবল বৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামের তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদসহ সবকটি নদনদীর পানি অনেক কমে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো বন্যার্তরা রয়েছেন কষ্টে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে পানি বাড়লেও তা গতকাল দুপুরের দিকে স্থির অবস্থানে থাকে এবং পরে আবার কমতে থাছে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের নুনখাওয়া, হাতিয়া ও চিলমারী- এ তিনটি পয়েন্টেও পানি বাড়লেও দুপুরের পর একটু কমেছে। অন্যান্য সব নদীর পানি দ্রতই কমে এখন জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে চরাঞ্চলের মানুষের কৃষি জমি ও পানিতে তলিয়ে থাকা ফসল রয়েছে নষ্টের আশঙ্কায়। এদিকে নদনদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চল থেকে পানি কমে গেলেও এসব এলাকার চরের ও দ্বীপচরের কৃষি জমির তলিয়ে থাকা ফসলগুলো এখনো পানিতে নিমজ্জিত। পানি দ্রুত সরে গেলে কিছুটা রক্ষা হতে পারে বলে জানায় কৃষি বিভাগ। আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে হলেও কমতে শুরু করেছে পানি : সার্বক্ষণিক নজরদারিতে প্রশাসন
নওগাঁ : নওগাঁর আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমার জোতবাজার পয়েন্টে ৩০ ও রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া নদীর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের আত্রাই ও মান্দা পয়েন্টের ২১টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রেখেছে প্রশাসন। তারা বলছেন, আর বৃষ্টিপাত না হলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে পানি আরও কমে যাবে। আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দীন জানান, তার রোপণকৃত ১৬ বিঘা জমির ধান ডুবে গেছে। উপজেলার পালশা গ্রামের কৃষক আবদুল হালিম জানান, তিনি প্রায় ৯৫ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছিলেন। গত কয়েক দিনে কিছু ধান পানিতে ডুবে গেছে। তবে আজ থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। সামান্য ক্ষতি হবে ফসলের। আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ কুমার জানান, গত এক সপ্তাহে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জমির আমন ধান ও অন্যান্য ফসল পানিতে নিমজ্জিত হলেও কোনো বাড়িঘর ভেঙে যায়নি। রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আত্রাই উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ রসুলপুর, সদুপুর, লালুয়া, বেওলা, জগদাস, শিকারপুর, দুবাই, গুরনৈ ভাঙ্গাজাঙ্গাল, বৈঠাখালি ও নন্দনালী স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত স্থানগুলোতে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আখতার জাহান সাথী বলেন, আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার চকরামপুর, উত্তর চকরামপুর, কয়লাবাড়ী, জোকাহাট, দারিয়াপুর, নুরুল্লাবাদ, পারনুরুল্লাবাদ ও তালপাতিলা এলাকার অন্তত ১০টি বেড়িবাঁধকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শুক্রবার থেকে বৃষ্টিপাত অনেকটাই কমে গেছে এবং উজানের নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে দু-এক দিনের মধ্যে আরও পানি কমে যাবে। নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল জানান, গতকাল দুপুরে আত্রাই নদীর জোতবাজার পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং আত্রাই নদীর রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে পানি সমতল বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুটি নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখন পর্যন্ত জেলার কোথাও বাঁধ ভেঙে যায়নি।
লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে বন্যাকবলিত ৭০০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে জেলা বিএনপি। রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ও রাজপুর ইউনিয়নের ৭ শতাধিক বানভাসি মানুষের হাতে এসব ত্রাণ তুলে দেন জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাও আন্দোলন ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের রূপকার, জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু।