ক্যারিয়ারে ছয়টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন ২৮ বছর বয়সি রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক। এবারই প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন বাঁ-হাতি ওপেনার। পাকিস্তানের বিপক্ষে গতকাল অভিষেক হয় ঝিলিকের। অভিষেক ম্যাচেই বাজিমাত করেন বাঁ-হাতি ওপেনার ম্যাচ জেতানো হাফ সেঞ্চুরির ৫৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে। ঝিলিকের ঝলকানো ব্যাটিং; স্বর্ণা আক্তার, নাহিদা আক্তার ও মারুফা আক্তারের দুরন্ত বোলিংয়ে নারী বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১১৩ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের বড় জয়ে শুভ সূচনা করেছে বাংলাদেশ। নিগার বাহিনীর পরের ম্যাচ ৭ অক্টোবর গুয়াহাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ৫০ ওভারের ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের টার্গেট ১৩০ রান। ওভারপ্রতি টার্গেট মাত্র ২.৬। নিগার বাহিনীর জন্য যা কঠিন নয়। দুই ওপেনার ফারজানা হক পিঙ্কি ও রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক স্কোর বোর্ডে ৭ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হন। ফারজানা ২ রান করেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ঝিলিক ও শারমিন সুলতানা ৪৯ বলে ২৮ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হন। ৩৫ রানে ২ উইকেটের পতনের পর ঝিলিক ও অধিনায়ক নিগার ১২.৫ ওভারে ৬২ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হন। নিগার ৪৪ বলে ৫ চারে ২৩ রান করেন। ঝিলিক প্রত্যয়ী ব্যাটিং করে অপরাজিত থাকেন ৫৪ রানে। ম্যাচ জেতানো ৭৭ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৮টি চার।
স্বর্ণা প্রথমে ব্যাটার, পরে লেগ স্পিন করেন। বড় বড় টার্ন করানোর পাশাপাশি গুগলিটা ভালো করেন। গতকাল কলম্বোয় পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬ নম্বর বোলার হিসেবে বোলিং করেই পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন গুঁড়িয়ে দেন। তিনি টানা বোলিং করেন। তার বোলিং স্পেল ছিল ৩.৩-৩-৫-৩। বোলিংয়ে একটি বিরল ঘটনার জন্ম দেন। ৩৫ ওভারের দ্বিতীয় বলে স্বর্ণার বেরিয়ে যাওয়া বল ছেড়ে দেন নাশরা সান্ধু। কিন্তু নাশরার ব্যাট উইকেটে আঘাত হানলে বেলস পড়ে হিট উইকেট হন। নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে এমন ঘটনা দ্বিতীয়। ১৯৭৩ সালে প্রথম বিশ্বকাপে প্রথম হিট উইকেটের ঘটনা ঘটেছিল। সব মিলিয়ে নারী ক্রিকেটে হিট উইকেটের ঘটনা এটি নবমবার।
চলতি বছরের এপ্রিলে লাহোরে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। হারে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত সুযোগ পায় রানরেটের চুলচেরা বিশ্লেষণে। আট জাতির নারী বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। ভারত ও অস্ট্রেলিয়া শুভ সূচনা করেছে। নিগার বাহিনী বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে গতকাল। বাছাইপর্বে যে পাকিস্তানের কাছে হেরে বিশ্বকাপ খেলা প্রায় শেষ হয়ে যেতে বসেছিল, সেই দলটির বিপক্ষে কলম্বোয় জিতেছে। টস হেরে ফিল্ডিংয়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন দুমড়েমুচড়ে দিয়েছেন পেসার মারুফা, স্বর্ণা, বাঁ-হাতি স্পিনার নাহিদারা। নিগার বাহিনীর দুরন্ত বোলিংয়ে ৩৮.৩ ওভারে ১২৯ রানে অলআউট হয়েছে পাকিস্তান। সর্বোচ্চ ২৩ রান করেন রামীন শামীম। অধিনায়ক ফাতিমা সানা ২২, মুনিবা আলি ১৮, দিয়ানা বেগ অপরাজিত ১৬, সিদরা নাওয়াজ ১৫ রান করেন। নারী পেসার মারুফা দুরন্ত বোলিংয়ে প্রথম ওভারেই হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি করেন। ইনিংসের প্রথম ওভারের পঞ্চম ও ষষ্ঠ বলে ওমাইমা সোহেইল ও সিদরা আমিনকে আউট করেন। পরের ওভারের প্রথম বলে উইকেট নিতে ব্যর্থ হলে আসরের প্রথম হ্যাটট্রিকটি করতে পারেননি। তারপরও পাকিস্তানের ইনিংস শেষে ম্যাচসেরা বোলিং স্পেল ৭-০-৩১-২। দারুণ বোলিং করেন লেগ স্পিনার স্বর্ণা। পাকিস্তানের লেজ মুড়িয়ে দেওয়া তার স্পেল ৩.৩-৩-৫-৩। বাঁ-হাতি স্পিনার নাহিদা ছিলেন মিতব্যয়ী। তার বোলিং স্পেল ৮-১-১৯-২। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলা নিশিতা আক্তার নিশি ৬ ওভারে ২৮ রানের খরচে নেন ১ উইকেট। লেগ স্পিনার অলরাউন্ডার রাবেয়া খাতুন ছিল দারুণ মিতব্যয়ী। তার বোলিং স্পেল ৭-২-১৩-১। আরেক লেগ স্পিনার ফাহিমা খাতুনের স্পেল ৭-১-৩২-১।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ৩৮.৩ ওভারে ১২৯ (মুনিবা ১৭, রামিন ২৩, রিয়াজ ১৩, সিদরা নাওয়াজ ১৫, ফাতিমা ২২, ডায়ানা ১৬*; মারুফা ৭-০-৩১-২, নাহিদা ৮-১-১৯-২, স্বর্ণা ৩.৩-৩-৫-৩)
বাংলাদেশ : ৩১.১ ওভারে ১৩১/৩ (রুবাইয়া ৫৪*, নিগার ২৩, সোবহানা ২৪*; ফাতিমা ৮-১-৩০-১, ডায়ানা ৮-৩-১৪-১)
ফল : বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী, ম্যাচসেরা : মারুফা আক্তার