জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হারালে দেশে আবারও ১/১১ ঘটবে। গতকাল রাজধানীর খামারবাড়িতে অবস্থিত কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এনসিপির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত জাতীয় যুব সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। নাহিদ ইসলাম বলেন, গণ অভ্যুত্থানের এক বছরে আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। নতুন বন্দোবস্ত আমরা পাইনি। অভ্যুত্থান সমাপ্ত হয়নি। লড়াইও শেষ হয়নি। তিনি বলেন, চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ এবং চব্বিশের প্রজন্মকে প্রতারিত করতে সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু আমরা বলতে চাই সমীকরণ এখনই শেষ হয়ে যায়নি। ফলে যারা এখনই সমীকরণ মিলিয়ে ফেলেছে তারা ভুল পথে হাঁটছে। গণ অভ্যুত্থানের তারুণ্যের শক্তি এখনো রাজপথে আছে। জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাড় দিয়েছি।
কিন্তু জুলাই সনদে ১ পার্সেন্ট ছাড় দেব না। রাষ্ট্র কাঠামোর পুনর্বাসনে গণমানুষের পক্ষ থেকে যে মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা জুলাই সনদে দেওয়া হয়েছে তাতে এক পারসেন্টও ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, নির্বাচন, ভোটাধিকার, গণতন্ত্রের জন্যই আমাদের লড়াই ছিল। কিন্তু আমরা এটিও বলেছি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে যেতে হবে। বাংলাদেশের এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সংকট হলো স্থিতিশীলতা এবং ঐক্য ধরে রাখা। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা ধরে রাখতে না পারে তবে আরও একটি ১/১১ ঘটবে। তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিক দলগুলোকেই একসঙ্গে বসে করতে হবে এবং বাংলাদেশে এই সংস্কৃতিই কায়েম করতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা গণ অভ্যুত্থানের পক্ষের বৈষম্যবিরোধী শক্তি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে গত এক বছর ধরে ছাড় দিয়েছি। ছাড় দিতে দিতে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছে। আর ছাড় দেব না। আমরা এবার আদায় করে নেব। গণ অভ্যুত্থানের পরে আমরা নতুন বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। শহীদের রক্তের ওপরে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করে এই সরকার যেতে পারবে না। এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যেতে পারবে না।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, চাঁদাবাজি কোনো রাজনৈতিক দলের ইমেজের জন্য ভালো নয়। যারা সুবিধা নেওয়ার জন্য দলে এসেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গণ অভ্যুত্থানের জন্য তরুণদের সম্মান দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। বলেন, আগামীর গণপরিষদে তরুণদের নেতৃত্ব দেখতে চাই। জাতীয় প্রতিরক্ষার জন্য তরুণদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে বলেও জানান তিনি।
নাহিদ আরও বলেন, নাগরিক পার্টি যেমন রাজপথ থেকে গড়ে ওঠা দল এবং সারা দেশে সংগঠিত হচ্ছে তেমনি যুবশক্তিও রাজপথ থেকে গড়ে ওঠা দল। যুবশক্তি শুধু জাতীয় নাগরিক পার্টির ভ্যানগার্ড নয় দেশের ভ্যানগার্ড হবে। ক্ষমতার নির্ধারকরা যদি তরুণদের প্রতারিত করে তাহলে এদেশের ভবিষ্যৎ ভালো হবে না।
সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। যদি হয় তবে জুলাই গণ অভ্যুত্থানে যারা সংস্কারের জন্য শহীদ হয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের কবরে গিয়ে তাদের জীবন ফিরিয়ে দিতে হবে। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আমাদের মনের কথা বলেছেন। সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো তাহের, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ এনসিপি ও যুবশক্তির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। যুবশক্তির আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে যুবশক্তির পক্ষ থেকে তারুণ্যের প্রতি ৭ দফার যুব ইশতেহার ঘোষণা করেন।