গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে সেখানে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন পরিচালনার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই প্রশাসনের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে রাখার প্রস্তাব উঠে এসেছে বলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাজ্যকে সম্পৃক্ত করার জন্য ব্যাপক আলোচনায় আসা ব্লেয়ার বর্তমানে গাজা সংকট সমাধান ও যুদ্ধ-পরবর্তী প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করছেন। চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘে এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আরব নেতাদের মধ্যে।
বৈঠকে উপস্থাপিত প্রস্তাব অনুযায়ী, যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে গাজায় একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রশাসনকে জাতিসংঘ সমর্থন দেবে এবং আরবদেশগুলো সহযোগিতা করবে। গাজার শাসনব্যবস্থা পুনর্গঠনের পর ধীরে ধীরে এই প্রশাসনের দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
একটি প্রস্তাবে টনি ব্লেয়ারকে এই অন্তর্বর্তী প্রশাসনের নেতৃত্বে আনার কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও প্রস্তাবটিতে সমর্থন দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ব্লেয়ারের কার্যালয় জানিয়েছে, তিনি এমন কোনও উদ্যোগ সমর্থন করবেন না, যা গাজার জনগণকে তাদের ভূমি বা ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদের দিকে নিয়ে যাবে।
২০০৭ সালে প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়ার পর ব্লেয়ার কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত হিসেবে কাজ করেছেন। তার মূল লক্ষ্য ছিল ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা।
এই আলোচনা সামনে এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন যে, তিনি দুই রাষ্ট্রভিত্তিক শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে গাজার শাসনব্যবস্থায় হামাসের কোনও ভূমিকা থাকবে না এবং সংগঠনটিকে নিরস্ত্র হতে হবে।
এদিকে চলতি সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এরপর ফ্রান্সসহ আরও কয়েকটি দেশ একই সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে এবং এই উদ্যোগ হামাসকে পুরস্কৃত করার শামিল বলে উল্লেখ করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই শিশু ও নারী। জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন বলেছে, ইসরায়েল গাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান
বিডি প্রতিদিন/একেএ