বাংলাদেশের রাজনীতির হানাহানি বিদেশে টেনে নিয়ে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। প্রায়ই বিক্ষোভের নামে গালাগালি, হাতাহাতি ও মারধরের ঘটনা ঘটাচ্ছেন তারা। এসবে জড়িয়ে গ্রেপ্তারও হচ্ছেন অনেকে। এতে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এসবের কোনো রাজনৈতিক অর্জন নেই। এতে গায়ের জোর দেখানো আর প্রতিপক্ষকে হেয় করা ছাড়া কিছু হয় না।
সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নিউইয়র্কে যায় বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির প্রতিনিধিদল। জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের গালাগাল ও লাঞ্ছনার শিকার হন তারা। এ সময় এনসিপির সদস্যসচিব মো. আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিক্ষেপ করা হয়। অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করা হয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির ও এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারাকে। তারা গাড়িতে ওঠার পরও রাস্তায় শুয়ে গাড়ি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা।
গত শুক্রবার জাতিসংঘে মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণ চলাকালে সংস্থাটির সদর দপ্তরের বাইরে পাল্টাপাল্টি সমাবেশের আয়োজন করেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। নিউইয়র্ক পুলিশ ব্যারিকেড দেওয়ার পাশাপাশি কর্মসূচির জন্য আলাদা জায়গা নির্ধারণ করে দেয়। সমাবেশ চলাকালে মারধরের শিকার হন ভার্জিনিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি জি আই রাসেল। বিএনপির কর্মীরা ইউনূসের সমর্থনে স্লোগান দিয়ে রাসেলের ওপর হামলা চালান। সমাবেশ শেষে ফেরার পথে হামলার শিকার হন যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের নেতা হৃদয় মিয়া।
বিশ্লেষকদের মতে, নিউইয়র্কের বিমানবন্দর ও জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে যা ঘটেছে তা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। এর মাধ্যমে কোনো দলই রাজনৈতিভাবে লাভবান হয়নি। বরং বিদেশের মাটিতে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অন্য কোনো দেশের নাগরিকদের প্রতিবাদ অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ হয়। তারা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন। আমাদের মতো হাতাহাতি, মারামারি ও গালিগালাজ করেন না।
তিনি আরও বলেন, এসব কর্মকাণ্ডের ফলে দেশের ভারমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আমাদের দেশের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তা বিদেশেও পৌঁছে গেছে। দেশে আমরা যে রাজনীতি করি নিউইয়র্কেও তার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। আজকে একদল করছে, ভবিষ্যতে অন্যদল করবে। অতীতেও আমরা এই সংস্কৃতি দেখেছি। দেশের রাজনীতিতে এসব কর্মসূচির কোনো প্রভাব পড়বে বলে আমার মনে হয় না। শুধু গায়ের জোর দেখানো কিংবা প্রতিপক্ষকে হেয় করা ছাড়া এর কোনো মূল্য নেই। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে-তারা এ ধরনের কর্মসূচি কিংবা কর্মী দলে রাখবেন কি না। পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব বন্ধ করা যায় কি না সেটাও বিবেচনা করতে হবে।